রাজশাহী রবিবার, ২৯শে জুন ২০২৫, ১৬ই আষাঢ় ১৪৩২

আস্থা ফিরেছে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে


প্রকাশিত:
১৪ আগস্ট ২০২১ ২০:৫৬

আপডেট:
২৯ জুন ২০২৫ ১১:৪৭

ফাইল ছবি

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেড়েছে সেবার মান। কমেছে ভোগান্তি, জন অসন্তোষ। দীর্ঘ কয়েক যুগ পর হলেও চিকিৎসা সেবায় আলোর মুখ দেখছে দুর্গাপুর উপজেলাবাসী।

বদলে গেছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবার চিত্র। যোগ হয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও লোকবল। সংকট কাটিয়ে স্বচ্ছল হয়েছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের বিশেষায়িত রোগ নিরূপন যন্ত্রগুলো। সেবার মানে অমূল পরিবর্তন ঘটেছে অভিমত সেবাপ্রার্থী সাধারণ মানুষের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা বৃহত্তর কোন বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান না থাকায় এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপরেই প্রত্যক্ষভাবে নির্ভর করতে হয় প্রায় ২ লক্ষ উপজেলাবাসীকে। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে নানা অনিয়ম দুর্নীতি অবহেলায় প্রায়ই সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া অধিকাংশ রোগী ছুটতেন শহরের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে।

দুর্নীতির অভিযোগে পূর্বের (টিএইচও) আসাদুজ্জামানের স্টাডরিলিজের পড়ে নতুন (টিএইচও) হিসেবে মাহবুবা খাতুনের যোগদানের পড় থেকেই দৃশ্যপট পরিবর্তনহতে থাকে । সরকারি মেডিকেলের কথা মাথায় এলেই চোখের সামনে ভাসে দুর্গন্ধ যুক্ত নোংরা পরিবেশ। কিন্তু এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঢুকলেই দেখা মিলবে সারি সারি রংবেরঙের বিভিন্ন ফুলের গাছ রাতে ফুলের গন্ধে মুখরিত হয় পুরো হাসপাতাল চত্বর। একসময় প্রচলন ছিলো, সরকারি হাসপাতালে সব রোগের একই ধরনের ঔষধ মিলে। কিন্তু বর্তমানে মিলছে বিভিন্ন রোগের দামি দামি ঔষধ। আবার উল্লেখযোগ্য কিছু রোগের টেষ্ট ছাড়া সবই

করতে হতো বাহিরে, সেই টেস্টের মান নিয়েও জনমনে ছিল নানান প্রশ্ন । কিন্তু মাত্র ৮ মাসের ব্যবধানে ব্যাপক পরিবর্তন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরো সিস্টেমে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডাঃ মাহমুদা খাতুন গত ২৬/১১/২০ যোগদানের পার থেকেই নতুনভাবে বিভিন্ন সেবা চালু হয়েছে , যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-

১.গর্ভবতী ও গর্ভ পরবর্তী সেবা কেন্দ্র (ANCXPNC).
২.ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার কেন্দ্র।
৩. মহিলাদের জরায়ুমুখ ক্যান্সার স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং কার্যক্রম চালু।
৪.সিজারিয়ান সেকশন চালু।
৫. থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য রক্ত সঞ্চালন করার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
৬.মিডওয়াইফ দ্বারা চব্বিশ ঘণ্টা নরমাল ডেলিভারি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
৭.নতুন আঙ্গিকে কনফারেন্স রুম ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার রুম সাজানো হয়েছে।
৮. আউটডোরে সুন্দর হেল্প ডেস্কে টিকিট কাউন্টার তৈরি করা হয়েছে।
৯. অ্যাম্বুলেন্স এর ভাড়া ৮০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৬৫০ টাকা করা হয়েছে।
১০.খাবারের মান বজায় রাখতে বিশেষ মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে রান্নার পূর্বে ও পরে বিশেষভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
১১.টিএইচও অফিস কক্ষের সামনে বিশেষ অভিযোগ বক্স চালু করা হয়েছে যার মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিচয় গোপন রেখে সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হচ্ছে।
১২. পর্যাপ্ত পরিমাণে ঔষধ আউটডোরে ও ইনডোরে সাপ্লাই রাখা হয়েছে।
১৩.বাগানগুলোতে আরো ভেষজ উদ্ভিদ গাছ ও বাহির চত্বরে ১০০ টি বিভিন্ন ধরনের গাছ রোপন করা হয়েছে। সেই সাথে করোনা রুগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যাবস্থা চালু হয়েছে।

কথা হয় রোগী সূর্যহারা বেগমের সাথে তিনি জানান, আমি বিধবা, নিঃসন্তান, দেখার মত আপন কেউ নেই। অসুস্থতার কারণে প্রতিবেশীরা আমায় হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েছিল। সাথে কোনো টাকা ছিল না কখনো কল্পনাও করেনি হাসপাতাল থেকে সকল ঔষধ বিনামূল্যে ও সুন্দর খাবার পরিবেশন করা হবে। সবকিছু মিলিয়ে বিনামূল্যে অনেক ভালো চিকিৎসা পেয়েছি।

রোগী আব্দুল সালাম জানান, আগে হাসপাতাল থেকে সর্বোচ্চ গ্যাসের ওষুধ পাওয়া যেত। সকল রোগের অধিকাংশ সময়ে একই ওষুধ দিত। সেদিন ৩ টাকার একটি টিকিট কেটে ডাক্তারের কাছে গেলাম। ভাবলাম যে ওষুধগুলো লাগবে সেগুলো বাহির থেকে কিনব। কিন্তু অবাক হলাম তিনি কাউন্টারে যেতে বললেন ওষুধের জন্য। সকল ওষুধগুলো বিনামূল্যে দিল। ধন্যবাদ জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বর্তমান হাসপাতাল পরিচালককে।

এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাহবুবা খাতুন সংবাদকর্মীদের জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের কষ্ট দুর্ভোগ দূর করার লক্ষ্যে চিকিৎসা খাতকে বর্তমানে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। সেই আলোকেই হাসপাতালের সেবার মান বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করছি। আপনারা নিশ্চয় প্রত্যক্ষ করেছেন হাসপাতালের বিভিন্ন নতুন সেবা চালু হয়েছে যা পূর্বে ছিল না। আরো অনেক নতুন কর্মপরিকল্পনা রয়েছে আমাদের, হাসপাতালের নতুন জেনারেটর অথবা আইপিএস, পুরো বিল্ডিং সুন্দর করে রং করা।

হাসপাতাল চত্বরে রোগীদের বসার জন্য গোল ঘর করা। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য গ্যারেজ তৈরি করা ইত্যাদি আরও নানান উদ্যোগ রয়েছে। জনগণের টাকা জনগণের জন্যই ব্যবহার হবে। ভালো কিছু করতে পারলে নিশ্চয়ই সাধারন মানুষের দোয়া আমার কাছে সবথেকে বড়ো পাওয়া হবে।

 

 

আরপি/এসআর-০৬



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top