রাজশাহী মঙ্গলবার, ১২ই আগস্ট ২০২৫, ২৯শে শ্রাবণ ১৪৩২

পদ্মার পাড়ে শান্তির খোঁজে হাজারো মানুষ


প্রকাশিত:
২২ জুলাই ২০২৩ ২০:১৭

আপডেট:
১২ আগস্ট ২০২৫ ০৯:২১

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

বিকেল বেলায় ঘুরতে ভালো লাগে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। প্রিয় মানুষটির সাথে চললেই যেন সারাদিনের কষ্ট দূর করে দেয়। তাই তো হাঁটাচলার জন্য রাজশাহী নগরের বাসিন্দাদের সুস্থ বিনোদনের একমাত্র জায়গা এখন পদ্মার ধার। আগে এই জায়গা পরিত্যক্ত ছিল। পরে এই এলাকায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন পার্ক তৈরি করা হয়। সেই সঙ্গে নির্মাণ করা হয় ২ হাজার ৫৫৮ দশমিক ৮৫ বর্গমিটার ওয়াকওয়ে। ওই পথে হেঁটে হেঁটে বিনোদন পিয়াসি মানুষ নেমে যায় বালুচরে। প্রতিদিনই মানুষ এখানে কমবেশি এলেও ছুটির দিনগুলোতে থাকে উপচে পড়া ভিড়। এখানেই শান্তির খোঁজে আসে হাজার হাজার মানুষ।

 

গত শুক্রবার (২১ জুলাই) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের ঢল নেমেছে পদ্মা পাড়ে, ছুটির দিন মানুষ তার পরিবার বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজন নিয়ে পদ্মা নদীর পাড়ে আনন্দ উপভোগে মেতেছে। নগরীর এই ওয়াকওয়ে দিয়ে পথে হেঁটে হেঁটে বিনোদনপিয়াসি মানুষ নেমে যায় বালুচরে। প্রতিদিনই মানুষ এখানে কমবেশি এলেও ছুটির দিনগুলোতে থাকে উপচে পড়া ভিড়।

পদ্মা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে দূরে তাকালে মনে হবে কোনো একটি দ্বীপ। এই পদ্মার বুকে আছে বিশাল চর। চরের পরেই টলমল পদ্মার পানি। দূরে পানি ছুঁয়ে আছে আকাশ। সেদিকে তাকাতেই জুড়িয়ে যাবে প্রাণ। ইট-কাঠ-পাথরে বন্দি নাগরিক জীবনে একটু প্রশান্তি আনার জন্য এ রকম জায়গার তুলনা নেই। রাজশাহী নগরীর বড়কুঠি থেকে লালনশাহ পার্ক পর্যন্ত ওয়াকওয়ে থেকে এই সৌন্দর্যে মুগ্ধ সবাই।

বিকেল বেলায় পদ্মাপাড়ে পরিবারকে নিয়ে ঘুরতে আসেন আব্দুর রহমান। তিনি জানান, তিনি একজন সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলোতে পরিবারকে সময় দিতে পারেন না। ছুটির দিনে পরিবারকে নিয়ে পদ্মা নদীর তীরে ঘুরতে এসেছেন, বিকেলের এই বাতাসটা তাকে মুগ্ধ করে তোলে বলে জানান।

ওয়াকওয়েতে প্রতিদিন হাঁটতে আসেন কলেজশিক্ষক আতাউর রহমান। তিনি বলেন, নগরীর বিনোদনকেন্দ্র বলতে পদ্মাপাড়কে বলা যায়। এই পদ্মাপাড়ে একসময় হাঁটার মতো অবস্থা ছিল না। এখন অনেক সুন্দর ওয়াকওয়ে হয়েছে। প্রায় দুই কিলোমিটার দূর থেকে আসি এখানে। একই সাথে পদ্মার সৌন্দর্য্যেও উপভোগ করি। মাঝেমধ্যে পরিবারের সদস্যদেরও নিয়ে আসা হয়।

শাহমখদুম রূপোষ (রহ.) মাজারের সামনে একটি চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা বলেন, পদ্মার আসল সৌন্দর্য্য এখান থেকে উপভোগ করা যায়। সবচেয়ে ভালো লাগে এখানকার সেতুটা। গ্রাফিতিও খুব সুন্দর নজর কাড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সেতুতেই আমাদের বেশিরভাগ ছবি আছে।

দরগাপাড়া বাসিন্দা লুৎফর রহমান বলেন, বছর পাঁচেক আগেও নদীর ধারে যাওয়া যেত না। সবসময় গবাদি পশু, ও মাদকসেবীদের আড্ডা ছিল। এই পাঁচবছরে পদ্মা নদীর তীরের চেহারা পরিবর্তন হয়েছে। এখন মনে হয় একটি পার্ক। সবসময় সব বয়সী মানুষের আনাগোনা থাকে দেখতে ভালো লাগে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, পদ্মার সৌন্দর্য্যে উপভোগ করার জন্য ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। বাউন্ডারি ওয়াল, সৌন্দর্য্যবর্ধক গ্রিলদ্বারা বেষ্টিত রেলিং, ওয়াকওয়ে, দর্শনার্থীদের বসার বেঞ্চ, ক্যাফেটেরিয়া সংস্কার করা হচ্ছে। লালনশাহ বাঁধ সংলগ্ন রাস্তাটি প্রশস্তকরণসহ ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা গার্ডেন সংলগ্ন ব্রিজ হতে শাহ মখদুম (রহ.) মাজার সংলগ্ন ব্রিজ পর্যন্ত ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে মাজার সংলগ্ন এলাকায় একটি ও পদ্মা গার্ডেন সংলগ্ন এলাকায় আরেকটি ঝুলন্ত ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ৯৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ওভারব্রিজ দুটি ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ব্রিজের সৌন্দর্যবর্ধনে করা হয়েছে নান্দনিক গ্রাফিটি। রং আর তুলির আঁচড়ে ওভারব্রিজ দু’টিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নান্দনিকভাবে।

শাহমখদুম মাজারের কাছে নির্মিত ওভার ব্রিজটিতে ১৮টি পাইলিং করা হয়েছে। এটির স্প্যান ১৮ মিটার। রয়েছে চার মিটারের ছয়টি পিলার। ব্রিজটির সৌন্দর্যবর্ধনে ওয়ারক্যাবল সংযোজন করা হয়েছে। পদ্মা গার্ডেন সংলগ্ন ওভার ব্রিজটিতে ১২টি পাইলিং করা হয়েছে। এটির স্প্যান ১২ মিটার। ওভার ব্রিজ দু’টিতে র‌্যাম নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রিজ দু’টিতে ব্যয় হয়েছে ৯৮ লাখ ১৫ হাজার ৪৫১ টাকা। এটিতে দু’টি আর্চ করা হয়েছে। পাইলিং, অ্যাবাটমেন্ট ও উয়িং ওয়ালের ওপর নির্মাণ কাজ করা হয়েছে।

 

আরপি/ এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top