রাজশাহী সোমবার, ১১ই আগস্ট ২০২৫, ২৮শে শ্রাবণ ১৪৩২

১৮ কেজি মাংস ও ১০০ ডিম খাওয়া সেই বাবুল আর নেই


প্রকাশিত:
২৪ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৫৫

আপডেট:
১১ আগস্ট ২০২৫ ১৭:০৫

ফাইল ছবি

রাজশাহীর বাঘায় সেই ১৮ কেজি মাংস ও ১০০ ডিম খাওয়া বাবুল আকতার (৫০) আর নেই। সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় নিজ বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে তার। ইন্নালিল্লাহি----রাজিউন।

তিনি দীর্ঘদিন থেকে সমস্ত শরীরে বাত ও ব্যথারোগে ভুগছিলেন। শারীরিক পরীক্ষায় একমাস আগে কিডনি ও হৃদরোগ সমস্যায় ধরা পড়ে তার। এতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় নিজ বাড়িতে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১০টায় গঙ্গারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।

আরও পড়ুন: মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে অশান্তি করা হলে ‘খবর আছে’, বিএনপিকে কাদের

তার স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে,নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রয়েছে। বাবুল আকতার উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের গঙ্গারামপুর গ্রামের মৃত খেলাফত উল্লাহ সরকারের ছেলে।

জানা যায়, ২০১৮ সালে বাবুল আকতার ৪ ঘন্টা ১৮ মিনিটে ১৮ কেজি খাসির মাংস খেয়ে রেকর্ড করেন। পরে ১০০টি মুরগির ডিম এক টেবিলে বসে খেয়েছিলেন। তিনি খেতে বসলেই ২০ থেকে ২৫ কেজি ওজনের একটি কাঁঠাল নিমিষেই খেতে পারতেন। বিদ্যুতের গতিতে ১১ মন ওজনের কাঁঠের গুল একাই কাঁধে তুলে নিয়ে বহন করতেন। এক দৌড়ে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতেন স্বাভাবিকভাবে। একটানা ৪ ঘন্টা সাঁতার দিয়েও ক্লান্তি বোধ করতেন না।

১২৫ কেজি ওজনের বিশাল দেহ নিয়ে অনায়াসে গাছে উঠে ডাব পেড়ে খেতেন। তবে কারো সাথে বাজি ধরে এ কাজগুলো করতেন তিনি। তার বেশী খাবার খাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় অনেক দূর - দূরান্তের তারে দেখতে আসতেন। এতে করে এলাকায় তার পরিচিতি ছিল খাদক বাবুল হিসাবে।

খাদক বাবুল আকতারের স্ত্রী লাইলা বেগম বলেন, আমার শাশুড়ি বলতেন সে ১৯৭৩ সালে জন্মের পরপরই নাকি পৌনে এক কেজি করে গরুর দুধ পান করতেন। তারপর বেড়ে ওঠার পাশাপাশি আরো বেশি খাবার লাগতো। তিনি প্রাপ্ত বয়সে প্রতিদিন সকালের নাস্তায় পাঁচ কেজি গরুর মাংস খেতেন। তা না হয়ে যদি ডিম হতো তাহলে ২৫ থেকে ৩০টি মুরগির ডিম দিয়ে নাস্তা করতেন। এটা ছিলো তার স্বাভাবিক খাবার। আর কেউ বাজি ধরলে তো কোন কথা ছাড়াই ১০ থেকে ১৫ কেজি মাংস ও ৫০ থেকে ১০০টি ডিম, বড় সাইজের ১০০কলা খেয়ে ফেলতেন। বয়স বৃদ্ধির পর শারিরিক কিছু সমস্যার কারনে চিকিৎসকের কথা মতো খাওয়া কমিয়ে দিয়েছিল। 

মেয়ে যুথি খাতুন বলেন, বাবা একজন শক্তিশালী মানুষ ছিলেন। তার বিশাল দেহ আর অস্বাভিক খাদ্য ভক্ষণ করায় তার নাম পড়ে যায় ‘খাদক বাবুল আকতার’। যার স্বাভাবিক খাদ্য তালিকায় ৫ কেজি গরুর মাংস লাগতো। কিন্তু শারিরিক সুস্থ্যতার কথা ভেবেই খাদ্য তালিকা কমিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া তার ভবিষ্যৎ ভেবে পরিবারের লোকজনও সেইভাবে আর খেতে দিতো না।

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ১২ জনের মৃত্যু, ভর্তি ১৮৫২

ছেলে নবাব আলী বলেন, ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে জীবনের প্রথম তার বন্ধুদের সাথে রাজধানীর ঢাকায় গিয়েছিলেন। ওই দিন রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় ‘ভূত রেস্তোরা’ নামের একটি হোটেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে ভূত রেস্তোরায় শতাধিক লোকের মধ্যে ১৮ কেজি খাসির মাংস এক টেবিলে বসে খেয়েছিলেন। এমন অবাক করা খাওয়া দেখে ধরা পড়ে যান অনেক মিডিয়ার চোখে। সে সময় অদ্ভুত এই খাওয়ার কাহিনি তুলে ধরে ‘খাদক’ ‘ভোজন রসিকসহ রং-বেরঙ্গের নামে তাকে প্রচার করা হয়েছিল বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়।

মনিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, বাবুল আকতার অনেক জমি ছিল। সাংসারিক ছাড়া অন্য কোন কাজ করতো না তিনি। জমি বিক্রি করে খেয়ে প্রায় শেষ করেছে। তিনি খুব মিশুক প্রকৃতির লোক ছিলেন। সমাজের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে ভাল সম্পর্ক ছিল। তবে শারীরিক সমস্যার কারণে পরিবারের লোকজন মৃত্যুর আগে খাওয়া কমিয়ে দিয়েছিল। 

 

 

আরপি/এসআর-১২


বিষয়: মৃত্যু


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top