রাজশাহী সোমবার, ১১ই আগস্ট ২০২৫, ২৮শে শ্রাবণ ১৪৩২


দাঁড়ালেই মোটরসাইকেলে মামলা!


প্রকাশিত:
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:৪৬

আপডেট:
১১ আগস্ট ২০২৫ ১৮:৪৯

ফাইল ছবি

দীর্ঘ তিন বছর মিলন মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং করছেন। প্রথম দিকে পার্টটাইম চালাতেন। করোনায় ব্যবসায়ের লোকসান হওয়ায় রাইড শেয়ারিং করেই পরিবারের খরচ চালাতে হয় তাকে।

নিজের মোটরসাইকেল দিয়ে রাইড শেয়ারিং করে যা আসতো তাতে কোনোমতে চলছিল। আক্ষেপ নিয়ে মিলন বললেন, ‘যখন যাত্রী থাকে না, তখন দাঁড়ানোর জায়গা পাই না।

দাঁড়ালেই পুলিশ ‘অবৈধ পার্কিং’-এর মামলা দেয়। যাত্রী না থাকলে সারাদিন ঘুরে ঘুরে তেল পোড়াবো?’ রাইড শেয়ারিং করেন রাজধানীর এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো তাদের ক্ষোভ ট্রাফিক পুলিশের প্রতিই বেশি।

তাদের অভিযোগ- হয়রানির জন্যই পুলিশ মামলা দেয়। কাগজপত্র ঠিক থাকলেও দেখা যায় অবৈধ পার্কিংয়ের মামলা দিয়ে দিচ্ছে।

কেউ অভিযোগ করেন– মামলা থেকে বাঁচতে টাকা দিয়ে রফা করতে হয়। ৩ হাজার টাকার মামলায় অন্তত ১ হাজার কিংবা হাজার টাকার মামলায় ২৫০ টাকা দিলে ছাড়া পাওয়া যায়।

এমন ক্ষোভ থেকেই গত সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) গুলশান বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় নিজের মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছেন শওকত আলী নামের এক ব্যক্তি।

তিনি দাবি করেন, এক সপ্তাহ আগেই ট্রাফিক পুলিশ মামলা দিয়েছিল। অ্যাপের পরিবর্তে চুক্তিভিত্তিক যাত্রী নেওয়ায় মামলা দেওয়া হয়েছিল তাকে। সেদিন আবার মামলা দিতে চাইলে তিনি ক্ষোভে নিজের মোটরসাইকেলে আগুন দেন।

শওকত জানান, তার একটি স্যানিটারি পণ্যের দোকান ছিল। লোকসানের কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। সংসার চালাতে ও ঋণ শোধ করতে রাইড শেয়ারিং চালিয়ে আসছিলেন।

শওকত আলী যেখানে মোটরসাইকেলে আগুন দেন সেই এলাকার দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গুলশান লিংক রোডে জ্যামের কারণে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেল সরাতে হয়। রাস্তায় গাড়ি পার্কিং নিষেধ।

পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট জায়গাও আছে। রাইড শেয়ারিং করে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, একটি ট্রিপ থেকে অ্যাপ যে পরিমাণ টাকা কেটে নেয় তাতে আয় অনেক কমে যায়।

অনেকেই বাধ্য হয়ে চুক্তিতে যাত্রী নেয়। করোনার কারণে অনেকেরই চাকরি-ব্যবসা বন্ধ। বেশিরভাগই এই পেশায় এসেছে নিরুপায় হয়ে।

শওকত আলীর ঘটনার পর সারাদেশে কর্মবিরতির ডাক দেয় অ্যাপ-বেইজড ড্রাইভারস ইউনিয়ন অব বাংলাদেশ (ডিআরডিইউ)।

তাদের ছয় দফা দাবির মধ্য একটি হচ্ছে ঢাকা চট্টগ্রাম ও সিলেটে রাইড শেয়ারিংয়ের যানবাহন দাঁড়ানোর জায়গা দিতে হবে।

এ ছাড়া—অ্যাপস নির্ভর শ্রমিকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি, কমিশন ১০ শতাংশ করা, মিথ্যা বা সামান্য অজুহাতে কর্মহীন না করা ও সব ধরনের পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা, এনলিস্টকৃত রাইড শেয়ারকারী যানবাহনগুলোকে গণপরিবহনের আওতায় অ্যাডভান্সড ইনকাম ট্যাক্স (এআইটি) মুক্ত রাখা ও গতবছর গ্রহণ করা সব এআইটি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিও জানায় সংগঠনটি।

রাইড শেয়ারিং যারা করেন তাদের অভিযোগ সত্য নয়, এমন দাবি করে ট্রাফিক বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, রাইড শেয়ারিং যারা করেন তারা রাস্তার মোড়ে কিংবা ব্যস্ত জায়গায় মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। এতে জটলা তৈরি হয়।

তাছাড়া কাগজপত্র ঠিক থাকলে কাউকেই মামলা দেওয়া হয় না। যেটা দেওয়া হয় সেটা ট্রাফিক আইন ভঙ্গের কারণেই দেওয়া হয়।

মোটরসাইকেল চালকরা অনেকেই সিগনাল মানতে চান না। সিগনাল ছাড়ার আগেই টান দিয়ে এক ফাঁকে চলে যেতে চান। সেটাও অপরাধ।

আবার রাস্তায় যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকাটাও অবৈধ পার্কিং। এটা শুধু মোটরসাইকেলে নয়, সব যানবাহনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

প্রসঙ্গত, রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা-২০১৭’তেও বলা আছে- নির্ধারিত স্ট্যান্ড বা অনুমোদিত পার্কিং স্থান ছাড়া কোনও মোটরযান যাত্রী সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রাস্তায় যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না।

এ বিষয়ে ডিআরডিইউ-এর সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা কোনও মোড়ে দাঁড়াতে চাই না। আমরা কোথায় দাঁড়াবো, সেটা নির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া হোক।’

 

আরপি /আইএইচ-৫



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top