রাজশাহী সোমবার, ১১ই আগস্ট ২০২৫, ২৮শে শ্রাবণ ১৪৩২


সুদের টাকা আদায়ে মা-মেয়েকে গাছে বেঁধে নির্যাতন


প্রকাশিত:
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০২:১৪

আপডেট:
১১ আগস্ট ২০২৫ ১৮:৪০

ছবি: সংগৃহীত

বিভিন্ন সময় গ্রামের সাত ব্যক্তির কাছ থেকে সুদে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ধার নিয়েছেন কারখানা শ্রমিক মমতাজ বেগম। সময় মতো সেই সুদের টাকা দিতে না পারায় মামতাজ বেগম ও তার মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেছেন দুই পাওনাদার।

খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সিরাজপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগীরা হলেন- কালিয়াকৈর উপজেলার সিরাজপুর এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৩০) ও মেয়ে মাহবুবা আক্তার ঝুমা (১৬)। ঝুমা স্থানীয় একটি স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় মমতাজ বেগম বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ভুক্তভোগীর পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, পাঁচ বছর আগে মমতাজ বেগমের স্বামী আব্দুর রশিদ মারা যান। এরপর মমতাজ বেগম তার একমাত্র মেয়ে ঝুমাকে নিয়ে বোনের জমিতে বসবাস করে আসছেন। এছাড়া তিনি পোশাক কারখানায় কাজ করে অনেক কষ্টে তার মেয়ে ঝুমাকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। নানা অভাব-অনটনের মধ্যে কোনো রকমে তাদের সংসার চলছে।

এর মধ্যে তাদের সংসারে হানা দেয় একটি প্রতারক চক্র। ওই চক্রের ফাঁদে পড়ে স্বর্ণালংকারসহ আনুমানিক প্রায় তিন লাখ টাকা ঋণ হয়ে পড়েন মমতাজ বেগম। পরে তাকে বাধ্য হয়ে স্থানীয় আব্দুল গফুর ড্রাইভার ও মনির হোসেনের পরিবারসহ বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিতে হয়েছে।

টাকা নেওয়ার দুই মাস পর থেকে সুদের টাকা আদায় করতে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দেন তারা। এ নিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় মাতব্বররা মধ্যস্থতা করে সুদের টাকা পরিশোধের জন্য এক মাসের সময় বেঁধে দেন। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময় শেষ না হতেই গফুর ড্রাইভার, তার স্ত্রী কুলসুম বেগম, ছেলে রিপন হোসেন এবং সুদখোর মনির হোসেন ও তার স্ত্রী শিল্পী বেগম, মেয়ে মুক্তা আক্তার, ছেলে শহিদ হোসেন, স্থানীয় নয়ন হোসেন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিধবা মমতাজ বেগমের বাড়ি ঘেরাও করেন।

এ সময় তারা সুদের টাকা আদায় করতে মমতাজ বেগমকে একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করতে থাকেন। মাকে মারধরের হাত থেকে বাঁচাতে মেয়ে ঝুমা এগিয়ে গেলে তাকেও একই গাছে বেঁধে রাখা হয়।

এই দৃশ্য ভিডিও ধারণ করতে গেলে মমতাজের ছোট বোন মেহেরিন সুলতানাকেও তারা গাছের সঙ্গে বাঁধার চেষ্টা করেন। মা-মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে প্রায় ঘণ্টাখানেক নির্যাতন চালালেও কেউ এগিয়ে আসেনি। কৌশলে মেহেরিন ৯৯৯-এ ফোন করেন। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। এ সময়ে অন্যরা পালিয়ে যান। পরে বিকেলে মমতাজ বেগম বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

ভুক্তভোগী মমতাজ বেগম বলেন, একটি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রায় তিন লাখ টাকা হারিয়েছি। ওই টাকা যোগাড় করতে গফুর ড্রাইভার ও মনির হোসেনের পরিবারসহ কয়েকজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিতে হয়েছে। ওই টাকা ফেরত দেয়ার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইব্রাহীম এক মাসের সময় দিয়েছেন। আমি ওই টাকা ফেরত দিব। কিন্তু ওই সময় শেষ হওয়ার আগেই তারা বাড়ি ঘেরাও করে আমাকে ও আমার মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালিয়েছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আব্দুল গফুর জানান, তাদেরকে টাকা আদায়ের জন্য চাপ দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাউকে বাধা বা মারধর করা হয়নি। তাদের অভিযোগ মিথ্যা।

ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইব্রাহীম সিকদার জানান, ঘটনা শুনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি মা-মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে তাদের মারধর করা হচ্ছে। পরে তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করেছি। ঘটনাটি দুঃখজনক।

কালিয়াকৈর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ওই বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়। এ নিয়ে ভুক্তভোগী ওই নারী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top