রাজশাহী সোমবার, ১১ই আগস্ট ২০২৫, ২৮শে শ্রাবণ ১৪৩২


লোকসানে এশিয়ান টাইগার সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ড


প্রকাশিত:
১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:৩২

আপডেট:
১১ আগস্ট ২০২৫ ২৩:২২

ছবি: সংগৃহীত

লোকসানের কারণে সমাপ্ত হিসাব বছরে ইউনিটহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে এশিয়ান টাইগার সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ড। এর আগে তৃতীয় প্রান্তিকেই অস্বাভাবিক লোকসানে পড়ে ফান্ড। কিন্তু লোকসানের কোনো ব্যাখ্যা ফান্ডটির আর্থিক প্রতিবেদনে দেয়নি। এর মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছে। শুধু তাই নয় ফান্ডটির আর্থিক প্রতিবেদনে হিসাব গণনায় নানা অসঙ্গতিও রয়েছে।

এদিকে, আইন পরিপালনে ব্যর্থ হওয়াসহ নানা অসঙ্গতির বিষয়টি খোদ স্টক এক্সচেঞ্জের অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে। এ কারণে ফান্ড ম্যানেজারের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

জানা গেছে, ৩০ জুন, ২০২০ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরে ফান্ডটির ইউনিট ধারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। সমাপ্ত হিসাব বছরে ইউনিটপ্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৬৯ পয়সা এবং বাজার মূল্য অনুযায়ী, এনএভি ছিল ১০ টাকা ৬ পয়সা। কস্ট প্রাইজ অনুযায়ী এনএভি ছিল ১০ টাকা ৯৭ পয়সা।

এদিকে, এশিয়ান টাইগার সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ডের গত ২০১৯ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে ইউনিটপ্রতি লোকসান হয়েছিল ১ টাকা ৬৩ পয়সা এবং নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ১২ পয়সা (নেগেটিভ), আগের বছর একই সময়ে ইউনিটপ্রতি আয় হয়েছিল ৯২ পয়সা এবং নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ছিল ৭৯।

আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি আয় কমেছে ২৭৭ শতাংশ এবং ১১৫ শতাংশ নেগেটিভ ক্যাশ ফ্লো হয়েছে। আয়ে অস্বাভাবিক ধস কি কারণে হয়েছে সে বিষয়ে ফান্ডটির তত্ত্বাবধায়ক সুনির্দিষ্ট যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ দেখাতে পারেনি। কারণ দেখাতে ব্যর্থ হওয়ার মাধ্যমে ফান্ড ম্যানেজার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০১৮ সালের নোটিফিকেশন লঙ্ঘন করেছে। আর বিএসইসির আইন পরিপালন না করার কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছে ডিএসই।

২০১৮ সালের জুন মাসে জারি করা নোটিফিকেশনের গেজেটে, চার নম্বর বিধিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভ্ক্তু প্রতিষ্ঠানের প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির নিয়ম সম্পর্কে বলা হয়েছে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ১৯৮৭ অনুযায়ী প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। একই সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল একাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস), ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) প্রয়োগ করে প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে। এশিয়ান টাইগার সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ডের প্রতিবেদনে আলোচ্য বিষয়গুলো অনুপস্থিত।

স্টক এক্সচেঞ্জের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো কমপ্লায়েন্স পরিপালন করছে কিনা তা সব সময় প্রাথমিকভাবে দেখভাল করেন স্টক এক্সচেঞ্জ। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে লিস্টিং রেগুলেশন আইন তা নিয়ে অনুসন্ধান করে প্রাপ্ত প্রতিবেদন কমিশনে পাঠানো হয়। কমিশন নিয়মানুযায়ী পদক্ষেপ নেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, ফান্ডটির আয় অস্বাভাবিকভাবে কমার কারণে তাদের নিকট ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তাদের ব্যাখ্যা পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

২০২০ সালের ৩১ মার্চের নয় মাসের প্রতিবেদনে ডাইরেক্ট মেথড ব্যবহার করে ফান্ডটির ক্যাশ ফ্লো হিসাব করা হয়েছে। সেখানে ফান্ডটি ক্যাশ ফ্লোতে পুনরায় ফিরে আসার বিষয়ে কোনো ধরনের তথ্য উপস্থাপন করেনি। এছাড়া প্রতিবেদনে নগদ প্রবাহের সঙ্গে নেট আয় বা মুনাফার সমন্বয়ের বিষয়টিও অনুপস্থিত রয়েছে। এছাড়া ইউনিটপ্রতি ক্যাশ ফ্লো গণনা, নেট অ্যাসেট ভ্যালু গণনায় ফান্ডটির বিএসইসির নোটিফিকেশন লঙ্ঘন করেছে। এসব বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জ।

২০১৮ সালের জুন মাসে বিএসইসির জারি করা নোটিফিকেশন পরবর্তীতে গেজেটে, ৪ এর ই বিধিতে ক্যাশ ফ্লো হিসাবে ডাইরেক্ট মেথড পদ্ধতির পাশাপাশি নিট আয়, নিট মুনাফা, অপারেটিং এক্টিভিটিজ সমন্বয় করে গণনার কথা বলা হয়েছে।

এশিয়ান টাইগার সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ড ম্যানেজার প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হলো মিউচুয়াল ফান্ড। কিন্তু আমাদের দেশে তার উল্টো। এ কারণে আমাদের দেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা দিন দিন তলানিতে নেমে গেছে। বর্তমান কমিশন চেষ্টা করছে ফান্ডগুলোর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে। তবে সেক্ষেত্রে ফান্ড ম্যানেজারদেরও স্বদিচ্ছা থাকতে হবে।

এ সম্পর্কে অধ্যাপক আবু আহমেদ গনমাধ্যমকে বলেন, বর্তমান কমিশন ফান্ড নিয়ে কাজ করছে বলে শুনেছি। এমন কিছু কাজ করতে হবে যাতে ফান্ড ম্যানেজাররা ভালো পারফর্মেন্স করতে পারে। তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে আমাদের দেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। 

 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top