রাজশাহী সোমবার, ১১ই আগস্ট ২০২৫, ২৮শে শ্রাবণ ১৪৩২


কৌশলে ২৮ জনকে বিয়ে করেন রোমানা!


প্রকাশিত:
১৩ মার্চ ২০২১ ১৬:১৫

আপডেট:
১১ আগস্ট ২০২৫ ১৯:১০

রোমানা ইসলাম স্বর্ণা, ফাইল ছবি

একটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন রোমানা ইসলাম স্বর্ণা। সেটি পুঁজি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবাসীদের সঙ্গে খাতির জমাতেন। কখনো স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স আবার সংসারের আর্থিক সংকটসহ নানা কারণ দেখিয়ে নিতেন টাকা। দেশে ফিরলে তাদের সঙ্গে দেখা করতেন। একান্তে সময় কাটিয়ে গোপনে ছবি তুলতেন। পরে সেই অন্তরঙ্গ ছবি দেখিয়ে করতেন বিয়ে। ভয় দেখিয়ে লিখে নিতেন জায়গা-জমিও। পুরো পরিবারের সবাই এ প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। সেই পরিবারটিকে খুঁজে পেয়েছে পুলিশ।

প্রতারিতদের দাবি, ২৮ জনের সঙ্গে এভাবে প্রতারণা করে বিয়ে করে রোমানা হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। পুলিশ বলছে, এই পরিবারের প্রতিটি সদস্য প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ কাজে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

রেমানা ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে খুলতেন ফেসবুক আইডি। আপলোড করতেন রগরগে (আপত্তিকর) সব ছবি। এরপর প্রবাসীদের টার্গেট করে ফ্রেন্ড বানিয়ে গড়ে তুলতেন প্রেমের সম্পর্ক। হাতিয়ে নিতেন টাকা। ঠিক একইভাবে কখনো ফ্ল্যাট কেনা আবার কখনো গাড়ি কেনার নাম করে রোমানা সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলাম জুয়েলের কাছ থেকে এক বছরে বিভিন্ন সময়ে নেন আড়াই কোটি টাকা।

এমন সব প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন মডেল ও অভিনেত্রী রোমানা ইসলাম স্বর্ণা। এর আগে স্বর্ণার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা ঠুকেন কামরুল হাসান নামে এক সৌদি প্রবাসী। তার মামলার ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ার সি ব্লকের একটি বাড়ি থেকে স্বর্ণাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।

গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসছে। অভিযোগ উঠেছে, অভিনেত্রী স্বর্ণার প্রেমের ফাঁদে পড়ে সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলাম জুয়েলই সর্বস্বান্ত হননি। এখন পর্যন্ত ২৮ জনের সঙ্গে এভাবে প্রতারণা করে বিয়ে করে স্বর্ণা হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

২৮ জনের বিষয়ে তথ্য না দিলেও কামরুল ইসলামের প্রতারিত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে ডিএমপির ডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, রোমানা স্বর্ণার বিরুদ্ধে আমরা এমন প্রতারণার অনেক অভিযোগ পেয়েছি। অনেককে প্রলোভন দেখিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে সর্বস্বান্ত করেছে রোমানা। টেলিফোনে প্রতারিতরা এসব অভিযোগ করছেন। আমরা তাদের থানায় আসতে বলেছি।

প্রতারিত হওয়া প্রবাসী কামরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, সে আমার সাথে প্রথমে ভাল সম্পর্কে করে। এরপর লালমাটিয়ায় ফ্ল্যাট কেনার নাম করে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা নেয়। আমি দেশে আসার পর আমাকে বাসায় ডাকে। আমি যাই। গেলে তারা আমাকে কিছুটা একটা খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলে। এরপর আমার খারাপ ছবি তুলে নেয় ও আমার থেকে স্ট্যাম্পে সাইন নিয়ে নেয়। এভাবেই সে আমাকে জোর করে বিয়ে করে। তার মোবাইল, ঘড়ি, গাড়ি আর সবই আমার কিনে দেওয়া। আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে বললেও তা মিথ্যা। তাই আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।

এরপর বিয়ের জন্য দেশে এনে জুয়েলকে কিছুদিন নিজের বাসায় আটকে রাখেন রোমানা। করেন বিয়েও। এসব শোনার পর নিজের আগের স্ত্রীর সাথে জুয়েলের ছাড়াছাড়িও হয়। রোমানা হঠাতই একদিন সুযোগ বুঝে ধারণ করেন জুয়েলের অন্তরঙ্গ নানা মুহূর্তের ছবি। এরপর ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে রোমানা জোর করে স্ট্যাম্পে জুয়েলের সাক্ষর রেখে জায়গা জমি হাতিয়ে নেন। এরপর রোমানাও জুয়েলকে ডিভোর্স দেন।

পুলিশ বলছে, এই পরিবারের প্রতিটি সদস্যই বিপরীত লিঙ্গের সাথে একই প্রক্রিয়ার প্রেম ও বিয়ের সম্পর্কের অভিনয় করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ডিএমপির ডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, রোমানা, তার মা, তার ভাই ও ভাইয়ের বউ ও রোমানার ছেলে তারা সবাই এই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। তিনি বিদেশ থেকে আসার পর বাসায় নিয়ে উলঙ্গ করে তার ছবি তুলে তারা। এরপর টাকা দাবি করে বসে। টাকা না দিলে সেই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।

আরপি/ এসআই-৩



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top