রাজশাহী সোমবার, ১১ই আগস্ট ২০২৫, ২৮শে শ্রাবণ ১৪৩২


ধামইরহাটে বন্যায় দুর্ভোগে কয়েক হাজার মানুষ


প্রকাশিত:
১ অক্টোবর ২০২০ ২২:০৫

আপডেট:
১১ আগস্ট ২০২৫ ১৬:৫৬

ধামইরহাটে বন্যা। ছবি: সংবাদদাতা

নওগাঁর ধামইরহাটে বন্যায় দুর্ভোগে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। উজানের ঢলে বন্যার কারনে নিম্নাঞ্চলের মানুষের সাথে হাবুডুবু খাচ্ছে গরু-ছাগল। সেখানে বাঁধ ভাঙ্গার শঙ্কায় গ্রামের শত শত মানুষের নির্ঘুম রাত কাটছে খোলা আকাশের নিচে। আবহাওয়ার এমন বেখেয়ালি আচরণে টানা বৃষ্টিতে উজানের ঢলে বন্যা দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সম্প্রতি উজানের ঢলে আত্রাই নদীর পানি উপজেলার শিমুলতলী পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার ৮ নম্বর খেলনা ইউনিয়ন ও রসপুর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের (রসপুর-সরাইল গুচ্ছগ্রাম সহ) ভগবানপুর, উদয়শ্রীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এক কোমর থেকে কোথাও কোথাও বাড়ি ঘরের দেয়ালের মাঝ পর্যন্ত বন্যার পানিতে সাধারণ মানুষের সাথে হাবুডুবু খাচ্ছে গৃহপালিত পশু গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি। ঘরের ভেতরে কোমর ভর্তি পানি থাকায় রান্না করতে না পারায় ছোট শিশুদের নিয়ে পরিবারের লোকজন পড়েছেন বেকায়দায়।

রসপুর বাজারের আশেপাশে বন্যা দুর্গত গুচ্ছগ্রামের মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে গরু, ছাগল ও শিশুদের নিয়ে বাঁধের উপর খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। অন্যদিকে ঘরের ভেতরে থাকা চাল ডাল তরিতরকারি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় না খেয়ে থাকার অভিযোগও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ত্রাণ নিয়ে বন্যা দুর্গত ও অসহায় সাধারণ মানুষের পাশে এখনো কোনো জনপ্রতিনিধি সরোজমিনে পরিদর্শন ও বন্যা দুর্গত মানুষের খোঁজ খবর না নেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে চাপা ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বাঁধে পানি উন্নয়ন বোডের রেগুলেটর থাকায় খুব সহজেই বন্যার পানি ঢুকে পলির আবাদি জমিতে ফলানো ফসল যেমন আমন ধান, কলা, বেগুন, পোটল, মুলা, শাকসবজি, শসা, ঝাল, পেঁপে, পেয়ারা, আখসহ প্রায় দুইশত বিঘা জমিতে ফলানো কৃষকের স্বপ্ন বন্যার পানিতে ডুবে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, আশেপাশের সকল পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ায় পথে বসেছেন মাছ চাষিরা। এতে প্রায় কয়েকশ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।

রসপুর গ্রামের মো. আব্দুল হামিদ, নাসির উদ্দিন ও স্থানীয় দুর্গা মন্দিরের সভাপতি অলিভ চন্দ্রদাস অভিযোগ করে বলেন, ক'দিন ধরে বন্যার পানিতে ভাসছি। আমাদের দুঃখ-দুর্দশায় সমবেদনা জানাতে কেউ আসেনি।

সরাইল গুচ্ছগ্রামের গণেশ মাহিস্বর ও নব মুসলিম শেফালী বেগম এর সঙ্গে দেখা হলে বলেন, বাড়ি ঘরের ভিতরে এক কোমর পানি। ঘরে রাখা খাবার চাল, ডাল, জিনিসপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে। কোন সাহায্য সহযোগীতা না পালে খামোকি।

এ বিষয়ে ৮ নম্বর খেলনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সালাম বলেন, মেম্বারদের নিয়ে আমি সবসময় খোঁজ খবর রাখছি। কিছু কিছু জায়গায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে বালির বস্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। পিআইও, পৌর মেয়রসহ উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে বন্যার ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়েছি। বাঁধে যারা আশ্রয় নিয়েছে তাদের তালিকা করা হবে। টিআর চাল এই মুহুর্তে আমাদের কাছে নেই, চাল পেলে বন্যা দুর্গতদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

উপজেলা পিআইও ইস্রাফিল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা ২৭ তাং উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানসহ অনেককে নিয়ে খেলনা ইউনিয়নের ভগবানপুরসহ দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছি কিন্তু গুচ্ছগ্রামে যাওয়া হয়নি। বাঁধের পানি উন্নয়ন বোডের পুরোনো রেগুলেটর লিককরে গুচ্ছগ্রামসহ আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকাকায় বন্যা হয়েছে। রেগুলেটর মেরামত করা আমাদের কাজ নয় এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। আশাকরি খুব শিঘ্রয় আমরা ৫ টন চাল বরাদ্দ পাবো। ত্রাণের চাল পেলেই দূর্গতদের মাঝে বন্টন করা হবে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রোপা আমনের ধান ১৫৪ হেক্টর, শাকসবজি ১৬ হেক্টরসহ মোট ১৭০ হেক্টর জমির আবাদ বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। নতুন করে এগুলো চাষের আর কোন সুজুক নেই বিধায় আমরা পরবর্তীতে আগাম রবি মৌসুমে আলু, পেঁয়াজ, সরিষা, রসুন চাষে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।

উপজেলা চেয়ারম্যান আজাহার আলী বলেন, আমরা গত কাল গিয়েছিলাম। বন্যার ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি। ইউএনও মহোদয় ছুটিতে আছেন উনি এলে ইউপি চেয়ারম্যনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলে দ্রুত ব্রাবস্থা নেওয়া হবে।

 

আরপি/আআ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top