রাজশাহী সোমবার, ১১ই আগস্ট ২০২৫, ২৮শে শ্রাবণ ১৪৩২


নগদ ডলারের সংকটে কমছে টাকার মান


প্রকাশিত:
১৪ অক্টোবর ২০২১ ২৩:৫০

আপডেট:
১১ আগস্ট ২০২৫ ১৬:৫৩

ফাইল ছবি

বাজারে চাহিদা ও জোগানের ব্যবধানে ডলারের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে বাড়ছে ডলারের দাম। আমদানিকারকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। আর এর প্রভাব পড়ছে গ্রাহক পর্যায়েও। বাজারে ডলারের সংকট কমাতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে প্রচুর পরিমাণে ডলার ছাড়তে শুরু করেছে। গত বছর উল্টো পরিস্থিতি ছিল। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনে নিয়েছিল।

করোনা মহামারির সময় দেশে রেমিট্যান্স আয় অনেক বেড়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আন্তর্জাতিক চলাচল শুরু হলে রেমিট্যান্স কমতে শুরু করেছে। অন্যদিকে, আমদানি ব্যয়ও বাড়তে শুরু করেছে। করোনা চলাকালীন শিল্পের কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানি কম ছিল। সম্প্রতি তা বাড়তে শুরু করেছে। মহামারি চলাকালে প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালেও এখন অবৈধ পথেও (হুন্ডি) কিছু আসছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। আর আমদানির ক্ষেত্রেও এই পথের আশ্রয় নেন অনেক আমদানিকারক। এছাড়া করোনা ভ্যাকসিন আমদানির অর্থও পরিশোধ করতে হচ্ছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী রফতানি আয়ও হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এসব কারণে করোনা মহামারি-পরবর্তীতে ডলারের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। অবশ্য ডলারের বাজার স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ বেশ কাজে আসছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষক ও ব্যাংকাররা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম আবারও বেড়েছে। দুই দিনের ব্যবধানে প্রতি ডলারে ৫ পয়সা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা ৬৫ পয়সায়। গত আগস্ট মাসের শুরুতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে ডলারের দাম বাড়ছে। মুদ্রাবাজারে দাম বাড়ার ফলে খোলা বাজারেও (কার্ব মার্কেট) বেড়েছে ডলারের দাম। এখানে এক ডলার কিনতে ব্যয় করতে হচ্ছে সাড়ে ৮৮ টাকা থেকে ৮৯ টাকা পর্যন্ত।

ডলারের চাহিদা ও দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বুধবার (১৩ অক্টোবর) বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় দেশে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও পণ্য আমদানি বেড়েছে। এসব পণ্যের দায় পরিশোধ করতে সংগত কারণেই ডলারের চাহিদা বাড়ছে। আর বাড়তি চাহিদার কারণে দামও কিছুটা বেড়েছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনের আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে। তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা মজুত রয়েছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, রফতানি ও রেমিট্যান্স আয়ের সঙ্গে আমদানি ব্যয়ের একটা অসামঞ্জস্য হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। এর ফলে ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য কাজ করছে, যা বেশ কাজেও আসছে বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বাজারে ডলারের চাহিদা তৈরি হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে। চলতি অর্থবছরের শুরু বা জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত বিক্রি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়েছে। গত আগস্ট মাসের আগে উল্টো চিত্র ছিল। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ব্যাংকগুলো থেকে ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে সব মিলিয়ে প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে রেকর্ড পরিমাণ এলসি খোলা হয়েছে। আগস্টে মোট ৭১৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারের এলসি খুলেছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৬১ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা)। এদিকে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের দুই মাসের (জুলাই-আগস্ট) হিসাবে এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। এ দুই মাসে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানির জন্য ১ হাজার ২১৩ কোটি (১২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে খোলা হয়েছিল ৮১৬ কোটি ৩০ লাখ ডলারের এলসি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে ১৭২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। প্রবাসী আয়ের এই অঙ্ক গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২০ সালের মে মাসে দেশে ১৫০ কোটি ডলার সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স আসে।

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো চাইলেও বাড়তি ডলার নিজেদের কাছে রাখতে পারে না। বৈদেশিক মুদ্রা রাখার বিষয়ে প্রতিটি ব্যাংকের নির্ধারিত সীমা আছে; যাকে এনওপি বা নেট ওপেন পজিশন বলে। যদি কোনো ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ডলার মজুত থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার বিক্রি করতে হয়। আর না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে হবে। কেউ নির্ধারিত সীমার বাইরে ডলার নিজেদের কাছে ধরে রাখলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জরিমানা গুনতে হয়। জরিমানার হাত থেকে বাঁচার জন্য ব্যাংকগুলো বাজারে ডলার বিক্রি করতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ব্যাংক তার মূলধনের ১৫ শতাংশের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের কাছে ধরে রাখতে পারে। এর অতিরিক্ত হলেই তাকে বাজারে ডলার বিক্রি করতে হবে।

 

 

আরপি/এসআর-১২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top