রাজশাহী সোমবার, ১১ই আগস্ট ২০২৫, ২৮শে শ্রাবণ ১৪৩২

প্রতিবন্ধী ২ সন্তানকে নিয়ে রাস্তায় কিসমত আরা


প্রকাশিত:
২৬ জানুয়ারী ২০২১ ২০:২২

আপডেট:
১১ আগস্ট ২০২৫ ২০:১৮

ছবি: প্রতিনিধি

বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ২ সন্তানের জননী কিসমত আরা বেগম। বয়স ৫৫ না ৬০ ঠিকভাবে বলতে পারেন না। বিলাসবহুল জীবন নয়, শুধু খেয়ে পরে বেঁচে থাকতেই পথে পথে ঘুরছেন এই অসহায় মা। মায়ের সঙ্গী হয়েছেন প্রতিবন্ধী রাকিব (২৫) ও সাকিব (২৩)।

দুই সন্তান রাকিব ও সাকিবকে ঠিক মত খেতে দিতেও পারেন না তিনি। তাদের পেটের খিদে মেটাতেই ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেন কিসমত আরা।

বেশির ভাগ সময় থাকেন রাজশাহী নগরীর নিউ মার্কেট এলাকায়। পথের মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে একটু সহানুভূতি কামনা করেন। কখনো কিছু টাকা মেলে, আবার কখনো মেলে না। তবুও সন্তানদের নিয়ে দিনভর পথে পথে ঘোরেন। যেন বাড়িতে ফেরার সময় কিছু চাল, ডাল ও সবজি কিনতে পারেন।

নগরীর দড়িখরবোনা এলাকায় বস্তির ছোট্ট একটা ঘরে দুই সন্তান ও বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে থাকেন। স্বামী আমিন উদ্দিন মন্ডলের দ্বিতীয় স্ত্রী তিনি। তাই বয়সের পার্থক্যটাও বেশি। ৯০ অতিক্রম করা আমিন উদ্দিন মন্ডল একসময় রিকশা চালাতেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে কর্মক্ষমতা হারান। এখন ঘরেই থাকেন। ঠিকমতো চলাফেরাও করতে পারেন না। ফলে সংসারের ভার এখন কিসমত আরার কাঁধে।

রাকিব ও সাকিব জন্মের পর থেকেই প্রতিবন্ধী। শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় কোলে, পিঠে অথবা হুইল চেয়ারে টানা ছাড়া উপায় নেই। দুজনের কেউই কথা বলতে পারে না। তাদের নাওয়া-খাওয়া, প্রসাব-পায়খানা সবই সামলান কিসমত আরা।

ভারাক্রান্ত বদনে কিসমত আরা বেগম জানান, জন্মের পরেই প্রতিবন্ধকতার লক্ষণ দেখা দেয়। তারা ভেবেছিলেন, ধীরে ধীরে বসতে শিখবে, হাঁটতে শিখবে। কিন্তু আর হাঁটতে-বসতে পারলো না তারা। কিছুটা বড় হওয়ার পরে কিছুদিন ডাক্তার ও কবিরাজ দেখিয়েছেন। অর্থের অভাবে পরে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। এখন রাস্তায় ঘোরেন জীবিকার সন্ধানে।

মা কিসমত আরা জানান, কোন সাহায্য পেলে উপকৃত হতেন তারা। নামমাত্র পাওয়া ভাতা দিয়ে তার সংসার চলেনা। তাই চিকিৎসা করাতে পারেন না দুই সন্তানের। অনেকে সাহায্যের কথা বললেও সেটার দেখা মেলেনা। ডাক্তার কবিরাজ দেখার মত সামর্থ নেই। সবাই সাহায্য করলে ভালোমত চিকিৎসা করাতে পারতেন বলে জানান তিনি।

কিসমত আরা বলেন, ‘স্বামীও অসুস্থ, অভাবের সংসার। এই পোলা দুইটা নিয়া কি করবো? তাই ভিক্ষা করি। লোকে খারাপ কথা বুলে, গালি দেয় তাও কিছু বলতে পারি না। সকালে আসি, সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করি। দিনে ভিক্ষা করে কিছু টাকা পাই, রাতে বাড়িতে চাল-সবজি কিনা নিয়ে যাই। কপালে যা জোটে তাই খাই। না জুটলে না খাইয়াই রাতদিন পার হয়।’ 

 

 

আরপি/এসআর-০২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top