রাজশাহী সোমবার, ৪ঠা আগস্ট ২০২৫, ২০শে শ্রাবণ ১৪৩২

রাজশাহীর আলুপট্টি মোড়ের নামকরণ হয়েছে যেভাবে!


প্রকাশিত:
৬ জুলাই ২০২০ ২১:০৭

আপডেট:
৪ আগস্ট ২০২৫ ০২:২৪

রাজশাহীর আলুপট্টি মোড়, ছবি: সংগৃহীত

পট্টী শব্দটি দুইভাবে ব্যবহৃত হয়; (১)-একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বিশেষ কোন দ্রব্য বেচা-কেনা বা সেবা প্রদান ও (২)-ছিঁড়ে যাওয়া কাপড়কে জোড়া তালি দেয়া বা পট্টি দেয়া।

রাজশাহীতে কয়েকটি এলাকা পট্টী হিসেবে পরিচিত: (১)-তুলাপট্টী, (২)-বেতপট্টী, (৩)-রেশমপট্টী ও (৪)-আলুপট্টী। তুলাপট্টী ও বেতপট্টী দৃশ্যমান। রেশমপট্টীতে রেশম সিল্ক কেনাবেচা এখন আর হয়না। আর আলুপট্টীতে কোন আলুর দোকান ও ব্যবসা নেই। বরং উচ্চ দালান কোঠা ও শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে স্থানটির অবস্থান। তা হলে প্রাসঙ্গিঁক কারনে প্রশ্ন আসে কেন ও কিভাবে এই জায়গার নাম আলুপট্টী হলো? যেখানে কোন আলুর ব্যবসা নেই।

রাজশাহীর স্থানীয় ভাষায় একটি শব্দ হলো ‘‘ম্যাঈন’’, (কোন অনুষ্ঠান বা বিয়ে বাড়িতে উপহার দেয়ার মাধ্যমে সম্মান প্রদর্শন) যদিও শব্দটি এখন অনেকটাই হারিয়ে গেছে। ১৯৭৫ খ্রীঃ পর্যন্ত কোন অনুষ্ঠানে ও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই মাঈন হিসেবে দেয়া হতো পিতল বা কাঁসার তৈরি জিনিসপত্র, যেমন-কলস, থালা, গ্লাস, ‘বাটী’ (বাটীকে রাজশাহীর স্থানীয় ভাষায় বলা হতো " খোরা”) ।

বর্তমানে গ্রামীনফোন অফিস/দৈনিক বার্তার উচ্চ দালানটির যেখানে অবস্থান তার পশ্চিম পার্শ্বে ১৩০ বছর ও তার অনেক পূর্বে অনেকগুলো কাঁসা পিতলের দোকান ছিল, রাজশাহীর স্থানীয় জনগণ সেই কারনে ঐ এলাকাকে বলতো “কাঁসা পট্টী”। ঐ এলাকা ছিল কাঁসা ও পিতলের তৈরি জিনিসের একটি বড় বাজার। অনেকেই এই এলাকাটিকে বলতো বাসুনিয়া পট্টী- কাঁসা বা পিতলের তৈরী ঐ দ্রব্যসামগ্রীকে রাজশাহীবাসী স্থানীয় ভাষায় বলে ‘‘বাসুন” তাই বাসুন থেকে বাসুনিয়াপট্টী ঐ এলাকার নামকরন হয়েছিল।

কাঁসা বা পিতলের তৈরি জিনিসপত্র তৈরির পূর্বে ঐ এলাকাটি ছিলো “মাড়োয়ারীদের”( ভারতীয় বংশভূত মূর্শিদাবাদ, চব্বিশ পরগণা, বহরমপুর ও কোলকাতা থেকে আগত একদল জনগোষ্ঠী যারা বিভিন্ন ব্যবসার সাথে জড়িত, এই জনগোষ্ঠীর কেউ কখনও কোন চাকুরি করেনা) পাটের ব্যবসার কেন্দ্রস্থল। একটু সম্মুখে দক্ষিণ দিকে পদ্মা নদী ঐ সময়ে ঐ স্থানের নাম ছিল “ষ্টীমার ঘাট” বড় নৌকা ও ষ্টীমার ব্যবসার জন্য ঐ ঘাটে এসে ভীড়তো। রাজশাহীতে আমের মৌসুমে বড় নৌকায় করে রাজশাহীর আম ঢাকার সদরঘাটে যেতো।


পাটের কারবারের সাথে সাথে ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশ থেকে ষ্টীমার ও নৌকায় করে প্রচুর আলু আসতো ঐ ঘাটে এবং তা পাটের গোডাউনে সংরক্ষন করা হতো, ক্রমান্বয়ে তা আলুর বড় ব্যবসা কেন্দ্রে পরিনত হয়। এইভাবে ঐ স্থানের নাম প্রথমে “কাঁসা পট্টী” তারপর “বাসুনিয়া পট্টী” ও তারপর আলুপট্টীতে রুপান্তরিত হয়ে যায়- আর ষ্টীমার ঘাটটির নাম হয়ে যায় আলুপট্টী ঘাট! আলুর ব্যবসার পরে ঐ স্থানে আর কোন ব্যবসা সম্প্রসারিত হয়নি- তাই আজ অবধি ঐ স্থানটির নাম আলুপট্টী নামেই স্থায়ী হয়ে আছে। সময়ের বিবর্তনে “কাঁসাপট্টী” ও “বাসুনিয়াপট্টী” নামটি হারিয়ে যায়- এটাই আলুপট্টী নামকরনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

রাজশাহীর আলুপট্টি মোড়ের নামকরণ হয়েছে যেভাবে! শিরোনামে লেখাটি লিখেছেন ড. মোঃ মহিউদ্দিন

 

আরপি/এমএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top