রাজশাহী সোমবার, ৫ই মে ২০২৫, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩২


কীভাবে বুঝবেন হৃদরোগ ঝুঁকিতে আছেন?


প্রকাশিত:
১৭ নভেম্বর ২০২১ ০৬:০৭

আপডেট:
৫ মে ২০২৫ ০৬:১৩

প্রতীকী ছবি

সুস্থ্–সবলভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেউ, কোনো সমস্যা নেই, একদিন হঠাৎ শোনা যায় তার ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক’ হয়ে গেছে। সমস্যা হলো এমন ঘটনা ঘটে যাওয়ার আগে প্রায়ই কিছু জানা যায় না। এ রকম হার্ট অ্যাটাকের পরিণতি হয় সাথে সাথে মৃত্যু, নয়তো জীবনের সঙ্গে আপস করে কোনোমতে চলা। তাই হৃদরোগ হওয়ার আগেই সাবধান হতে হবে।

যেভাবে বুঝবেন ঝুঁকিতে আছেন-
কোনো সমস্যা বোধ করছেন না, বুকে ব্যথা করে না কখনো, অনেক পরিশ্রমও করতে পারেন, তার মানে কোনো দিন হার্ট অ্যাটাক হবে না—এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। তবে ঝুঁকি কতটুকু আছে, তা জেনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে অকালমৃত্যু বা কঠিন পরিণতি এড়ানো যায়।

নিজের ঝুঁকি জানতে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে আপনি আপনার ঝুঁকির মাত্রা জানতে পারেন। প্রশ্নের বেশির ভাগ উত্তরই যদি ‘হ্যাঁ’ হয়ে থাকে, তবে আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বেশি।

আপনি কি ধূমপান করেন? আপনার পরিবারে কি হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস বা অল্প বয়সে হঠাৎ মৃত্যুর ইতিহাস আছে? আপনার কি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি আছে? আপনি কি কায়িক শ্রমবিহীন জীবন যাপন করেন? আপনি কি স্থূল বা আপনার কি ওজন বেশি? আপনার মানসিক চাপ কি প্রচণ্ড?

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণসমূহ

বেশির ভাগ সময় হার্ট অ্যাটাকে বুকের মধ্যে চাপ বোধ হয়, যা কয়েক মিনিটের বেশি সময় ধরে থাকে। ব্যথাটা মাঝেমধ্যে চলে যায়, আবার ফিরে আসে। একটা অস্বস্তিকর চাপ ও ঝাঁকুনি অনুভূত হয়। অনেক সময় বাহু, পিঠ, ঘাড়, চোয়াল অথবা পাকস্থলীতেও অস্বস্তি অনুভূত হয়।

অনেক সময় বুকে অস্বস্তির সঙ্গে সঙ্গে শ্বাস ছোট হয়ে আসে। অন্য লক্ষণগুলোর মধ্যে ঘাম দিয়ে শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব বা হালকা মাথাব্যথা, পিঠে বা চোয়ালে ব্যথা হতে পারে।

হাসপাতালে আসতে হবে গোল্ডেন আওয়ারে

হার্ট অ্যাটাক হলে অবশ্যই সাথে সাথে হাসপাতালে যেতে হবে। কারণ, হার্ট অ্যাটাকের পর প্রথম এক ঘণ্টা হলো গোল্ডেন আওয়ার, অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসকের জরুরি চিকিৎসা নিতে পারলে রোগীর প্রাণ রক্ষা প্রায় নিশ্চিত করা সম্ভব। হার্ট অ্যাটাক থেকে মুক্তি দিতে পারে 'গোল্ডেন আওয়ার'।

এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে বুঝব হার্ট অ্যাটাক, না গ্যাসের কারণে বুকব্যথা? এই দ্বিধাদ্বন্দ্বে অনেক সময় চলে যায়। বুকে ব্যথা চরমে উঠলে রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

রোগীর জীবনসংশয় দেখা দেয়। তারপরও চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেন। যদি হার্ট অ্যাটাকের তীব্রতা কম হয়ে থাকে, তাহলে হয়তো প্রাণ রক্ষা পায়। কিন্তু বাকি জীবন কষ্ট করে চলতে হয়।

কারণ, হার্ট অ্যাটাকের ফলে হৃৎপিণ্ডের কিছু অংশ অকেজো হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত হয়তো চরম ঝুঁকিতে পড়তে হয়। তাই একটু বেশি বয়সীরা বা যাঁরা ঝুঁকিতে আছেন, তাঁদের বুকে ব্যথা হলে অবহেলা না করে অন্তত একটা ইসিজি করে দেখতে পারেন যে হার্টের ব্যথা নয় তো?


ডায়াবেটিস থেকে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত:

অধিকাংশ ডায়াবেটিসের রোগী হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েই অকালে মৃত্যুবরণ করে থাকেন। ডায়াবেটিস ও হৃদ্‌রোগ—এ দুটি পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যে বিষয়গুলো ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত, যেমন অতি ওজন, ধূমপান, মন্দ খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা বা বংশগতি, এগুলো হৃদ্‌রোগেরও ঝুঁকি। তাই এ দুটি সমস্যা পরস্পরের হাত ধরেই চলে। একটির ঝুঁকি কমালে অপরটির ঝুঁকিও কমে আসে।

আর তাই রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। রক্তে চর্বির মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করুন ও প্রয়োজনে চর্বি কমানোর ওষুধ গ্রহণ করুন। উচ্চ ক্যালরি ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। অতিরিক্ত লবণও এড়িয়ে চলুন। ধূমপান করবেন না। সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।

সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হাঁটুন বা যেকোনো ব্যায়াম করুন। কায়িক পরিশ্রম বাড়ান। ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন। বিশেষ করে পেটের চর্বি কমানোর চেষ্টা করুন। নিয়মিত রক্তচাপ, শর্করা পরীক্ষা করুন, চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন ও হৃদ্‌রোগ আছে কি না, তা নির্ণয়ে সচেতন হোন। সব সময় যে উপসর্গ থাকবে, এমন কোনো কথা নেই।

ভালো অভ্যাসে সুস্থ থাকে হৃদযন্ত্রঃ ছোট্ট কিছু অভ্যাসের পরিবর্তন জীবনটাকে বদলে দিতে পারে। সুস্থ রাখতে পারে শরীরের হৃদ্‌যন্ত্রকে। এর জন্য কিছু অভ্যাস ছাড়তে হবে, আবার কিছু সাদরে গ্রহণ করতে হবে।

সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ও খাদ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া। ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে বড় প্রয়োজন প্রতিজ্ঞা।

সঠিক-স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়ামে নিজের অভ্যাসের পাশাপাশি সন্তান ও পরিজনদের মধ্যেও গড়ে তুলতে হবে।

 

লেখক: শিক্ষার্থী,কমিউনিটি প্যারামেডিক চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

 

আরপি/ আরপি/ এমএএইচ-১৫



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top