রাজশাহী রবিবার, ২৪শে আগস্ট ২০২৫, ১০ই ভাদ্র ১৪৩২


শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা : শাহমখদুম মেডিকেল কলেজের এমডিসহ ২২ জনের নামে মামলা


প্রকাশিত:
২৮ নভেম্বর ২০২০ ২১:৫৯

আপডেট:
২৪ আগস্ট ২০২৫ ১৭:৪৯

 

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় শাহমখদুম মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মনিরুজ্জামান স্বাধীনকে প্রধান করে মোট ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শুক্রবার রাতে রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

আহত ছাত্র আশিকুর রহমান এ মামলার বাদী।

চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুম মুনীর জানান, ৯ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরও ১৩ জনকে আসামি করে এ মামলা হয়েছে। রাতেই একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েনসহ বাকি আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চলছে।

এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর বেসরকারি শাহমখদুম মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনীরুজ্জামান স্বাধীনের ভাই মিঠু ও টিটুসহ ২০-২২ জন সশস্ত্র ক্যাডার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে ১২ জন শিক্ষার্থী আহত হন। তারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শনিবার কলেজ ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিত আদেশের বলে দ্রুত সময়ে অন্য প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে তাদের মাইগ্রেশান সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন। এ সমাবেশে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, শুরু থেকেই ভাড়া শিক্ষক ও সরঞ্জাম দেখিয়ে চলছিল রাজশাহীর প্রাইভেট শাহমখদুম মেডিকেল কলেজ। ২০১৩ সালে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর পর থেকে নানা অঘটনের মধ্যদিয়ে বছর বছর শিক্ষার্থী ভর্তি করে আসছিল কলেজটি। প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ পরিচালনার কোন শর্ত পূরণ না হওয়ায় গত ২ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশপত্রে কলেজটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এদিন পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে মোট ২২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের দেশের যে কোন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে দ্রুত মাইগ্রেশানের ব্যবস্থা করতে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দেন। সেই থেকে শিক্ষার্থীরা দ্রুত মাইগ্রেশানের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত নির্দেশপত্রে বলা হয়েছে ২০১৩ সালে চালুর পর প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ পরিচালনার কোন শর্তই পুরণ করতে পারেনি রাজশাহী শাহমখদুম মেডিকেল কলেজ। ফলে এই এটি পরিচালনা ও শিক্ষার্থী ভর্তির উপযোগী নয়। সেই সঙ্গে চলতি শিক্ষাবর্ষে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি না করারও নির্দেশ দেয়া হয়। শর্তহীনভাবে শিক্ষার্থীদের ছাড়পত্র দিতেও কলেজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশ পুণর্বিবেচনার আবেদন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। শনিবার মন্ত্রণালয়ের একটি টিম কলেজটি পরিদর্শনের নোটিশ দেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মন্ত্রণালয়ের একটি টিম মেডিকেল কলেজটি পরিদর্শন করবে এবং তাদেরকে দেখানোর জন্য শুক্রবার সন্ধ্যায় অন্য জায়গা থেকে মেডিকেল সরঞ্জাম এনে শাহমখদুম মেডিকেল কলেজের ল্যাবে বোঝাই করা হচ্ছিল। শিক্ষার্থীরা তা দেখে নিজেরা ছবি তুলছিলেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। আহত শিক্ষার্থীরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের আরও অভিযোগ, শাহমখদুম মেডিকেল কলেজের ওয়েবসাইটে ৪০ জন শিক্ষকসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সব কিছু ঠিকঠাক চলছে এমন সব তথ্য তুলে প্রচার করে প্রতিটি সেশনে শিক্ষার্থী আকর্ষণ ও ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ভাড়া করা শিক্ষক ও ভাড়ায় আনা মেডিকেল সরঞ্জাম দেখিয়ে একাডেমিক অনুমতি নবায়ন করে আসছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাদের আরও অভিযোগ, শাহমখদুম মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষার কোন পরিবেশ নেই। যখন উপর মহল থেকে কেউ পরিদর্শনে যান তখন নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিক ও ল্যাব থেকে যন্ত্রপাতি ও গবেষণা সরঞ্জাম ভাড়ায় নিয়ে ল্যাবে সাজিয়ে রাখা হয়। পরিদর্শন শেষ হলে সেসব সরঞ্জাম ফেরত দেওয়া হয়। পরিদর্শনের সময়ও শিক্ষক ভাড়া করে আনা হয়। আর শিক্ষার্থীরা ভর্তি ও সেশন ফি বাবদ যে টাকা পরিশোধ করে থাকেন সেগুলি দিয়ে শুধু জমি কেনার কাজ চলে। আর এসব টাকা দিয়ে কিছু ভবন তৈরির কাজ হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বলতে সেখানে কিছু হয় না।

এর আগে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের দাবিতে শিক্ষার্থী একাধিকবার আন্দোলন করেছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও তাদের ওপর হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে শাহমখদুম মেডিকেল কলেজের এমডি মুনীরুজ্জামান স্বাধীন বলেন, শনিবার মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শক টিম কলেজে আসছেন এই খবর পেয়ে কতিপয় শিক্ষার্থী শুক্রবার সন্ধ্যায় কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেন। কর্মকর্তা কর্মচারিরা তাদের বাধা প্রদান করেন। শিক্ষার্থীরা কর্মকর্তা কর্মচারিদের ওপর হামলা করেন।

 

 

আরপি/এসকে

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top