রাজশাহী মঙ্গলবার, ১৩ই মে ২০২৫, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩২


ঈদ ঘিরে বেড়েছে সিল্কের কদর


প্রকাশিত:
২৪ এপ্রিল ২০২২ ১৯:২৫

আপডেট:
২৪ এপ্রিল ২০২২ ১৯:৩৫

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

সিল্কের প্রসঙ্গ আসলেই অকপটে চলে আসে রাজশাহীর নাম। চোখে ভেসে ওঠে অনিন্দ্য এক সুন্দর মোলায়েম শাড়ীর কথা। রাজশাহী অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম অংশ রাজশাহীর সিল্ক শাড়ী। যেন একটি অপরটির পরিপূরক। সুপ্রাচীনকাল থেকেই রাজশাহীর আবহাওয়া রেশম চাষের জন্য অনুকূলে। ফলে প্রাচীনকাল থেকেই সুনামের জায়গা দখলে রেখেছে রাজশাহীর সিল্ক। দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে রাজশাহীর রেশম শিল্প।

এক সময় রাজশাহী সিল্কের নাম ডাক কেবল দেশের গন্ডির মধ্যে নয়, বহির্বিশ্বেও ছিল বেশ কদর। রাজশাহী সিল্কের প্রধান উপাদান হলো রেশম। সুক্ষ্ম তুঁত রেশম দিয়ে তৈরী রাজশাহীর সিল্ক শাড়ির জনপ্রিয়তা সিল্কের শাড়িগুলোর মধ্যে শীর্ষে। রেশমের মধ্যে সর্বাধিক সুক্ষ্ম তুঁত রেশম দিয়ে তৈরী হওয়ায় নোংরা হয় না খুব একটা। পরিষ্কার করা সহজ হয় যা অনেক বেশিই পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবান্ধব।

সিল্ক শাড়ির সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য, নমনীয়তা, ব্যবহারের আরামদায়কতা দিক বিচারে এগিয়ে থাকায় রাজশাহীর সিল্ক শাড়ি ভোক্তাদের কাছে পেয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। একটি দেশীয় কথিত প্রবাদ আছে যে, “মসলিনের শাড়ি ভাজ করে ম্যাচের বাক্সের ভেতর রাখা যায়”। এ থেকে সুক্ষ্মতা, হাতের কাজ ও জনপ্রিয়তা বোঝা যায় সহজেই।

রাজশাহীর সিল্ক শাড়ির চাহিদা থাকে বছড়জুড়েই। শুধু শাড়ি নয় রাজশাহীর সিল্কের থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি ও শার্টের চাহিদা বাড়ছে ক্রমেই। বিভিন্ন উৎসব, অনুষ্ঠান, ঈদ, পূজা-অর্চনায় বাঙালি মেয়েদের পছন্দের তালিকায় প্রথমেই থাকে রাজশাহীর সিল্ক শাড়ি। আর ছেলেদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে সিল্কের পাঞ্জাবি।

দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতর। অন্যান্য বড় উৎসবের ন্যায় ঈদকে ঘিরেও জমে উঠেছে সিল্ক কাপড়ের বাজার। নগরীর বিসিক এলাকার শো-রুমগুলোতে বেড়েছে ক্রেতাসমাগম। রাজশাহীর বাহিরেও বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতা এসেছেন প্রিয় মানুষকে উপহার দেওয়ার জন্য পছন্দের পোষাক কিনতে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও রেশমের তৈরি পোশাকে এসেছে বৈচিত্র্য ও নতুনত্বের ছোঁয়া। নজরকাড়া বাহারি ডিজাইনের রেশমি পোশাক কিনতে সিল্কের শো-রুমগুলোর দিকে এখন সবার নজর।

সরেজমিনে দেখা যায়, ছুটির দিন হওয়ায় নগরীর বিসিক এলাকার শো-রুমগুলোতে ক্রেতা সমাগমও ছিল যথেষ্ট। এমন কি সুযোগ বুঝে অন্য বিভাগ থেকেও এসেছেন ক্রেতারা। ক্রেতা উপস্থিতি ভালো হওয়ায় ফুরফুরে মেজাজে বেচা বিক্রি করছেন দোকানীরা। করোনার থাবায় দুই বছরের ক্ষতি কেটে উঠার স্বপ্নে বিভোর মালিক শ্রেণি।

নগরীর সপুরা সিল্কে কথা হয় স্কুল শিক্ষিকা রিজিয়া পারভীনের সাথে। কুষ্টিয়া থেকে আসা এই ক্রেতা বলেন, এর আগেও অনেক বার রাজশাহী থেকে সিল্কের কাপড় নিয়ে গেছি। বিশেষ করে বড় উৎসবগুলোতে কাপড় কেনার প্রথম তালিকায় রাজশাহীর সিল্কই থাকে। কোয়ালাটি ভালো ও খাঁটি সিল্ক হওয়ায় এবারও আসা।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহীতে সব রকমের দামের মধ্যেই সিল্ক পাওয়া যায়। অল্প দামের মধ্যেই আত্মীয় স্বজনদের পছন্দের পোষাক উপহার দেওয়া যায়। এবছরও মসলিন, বাটিক ও সফট সিল্কের মধ্যে শাড়ি, থ্রী-পিচ ও পাঞ্জাবি কিনেছি।

আরেক ক্রেতা মঞ্জুর রহমান খান বলেন, এর আগেও অনেক বার এসেছিলাম। সাধ্যের মধ্যে দাম ও মানে ভালো হওয়ার কারণে বার বার আসা। আজও একটা শার্ট ও একটা পাঞ্জাবী কিনলাম।

নগরীর সপুরা সিল্কের ম্যানেজার সাইদুর রহমান বলেন, ঈদকে ঘিরে সুঁই-সুতাকাতান, মসলিন, স্টিজ, কটিসিল্ক, জয়শ্রি, সিল্ক কাতান, ওয়াটার কাতান, জামদানি কাতান, বরকাতান, ধুপিয়ানা, ঝর্নাকাতান শাড়ি, থ্রি-পিস, ওরনা, পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়া ও স্কার্ফ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও বলাকা সিল্কের শাড়ি, পাঞ্জাবী, শার্ট, স্কার্ফ ও ওড়নার বিভিন্ন ডিজাইনের সরবরাহ আছে।

দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনার সব ধরণের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও সিল্কের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। নতুন করে কোনো কিছুর দাম বাড়ে নি বললেই চলে। জাতভেদে শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ থেকে ২০ হাজার টাকায়। থ্রী-পিচের ক্ষেত্রে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ১৮ কিংবা ২০ হাজার টাকার মধ্যে সব রকমের কালেকশন রয়েছে। এছাড়াও সাড়ে ৩ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে বাহারি ডিজাইনের পাঞ্জাবী।

ক্রেতা উপস্থিতি সন্তোষজনক জানিয়ে তিনি বলেন, অর্ধেক রোজার পর থেকেই ক্রেতার উপস্থিতি অনেক ভালো রয়েছে। আশা করি শেষ দশকে ক্রেতা সমাগম আরও বাড়বে। করোনাকালীন গত দুই বছরে বড় ধ্বস নেমেছে সিল্ক খাতে। এবারের ঈদে লোকসান কিছুটা কাটিয়ে উঠা যাবে বলেও আশাবাদী তিনি।

জানতে চাইলে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, করোনায় গত দুই বছরে সিল্কে ব্যাপক লোকসান হয়েছে। চলতি মৌসুমে ব্যবসায়ীরা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। রাজশাহীতে এবারের ঈদ মৌসুমে ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকার সিল্কের বেচাকেনা হবে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।

 

 

আরপি/এসআর-০৪



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top