রাজশাহী মঙ্গলবার, ১৩ই মে ২০২৫, ৩০শে বৈশাখ ১৪৩২


মালয়েশিয়ায় বন্যায় ভূমিধস: মৃত্যু ১৪, নিখোঁজ অনেকে


প্রকাশিত:
২২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৩:৫৪

আপডেট:
১৩ মে ২০২৫ ০২:২৬

ছবি: বিবিসি

তিন দিনের প্রবল বর্ষণে মালয়েশিয়ার আট প্রদেশে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, প্রবল বর্ষণজনিত ভূমিধস ও বন্যায় এ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৪ জনের এবং নিখোঁজ আছেন আরও অনেকে।

আকস্মিক এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। মালয়েশিয়া সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

এদিকে, উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ বিতরণে বিলম্ব হওয়ায় দেশজুড়ে কঠোর সমালোচনার মধ্যে পড়েছে মালয়েশিয়ার সরকার। এখনও অনেকে নিখোঁজ থাকায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার পূর্ব উপকূলীয় প্রদেশ পাহাং থেকে সোমবার ৫১ হাজারেরও বেশি মানুষকে তাদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে গিয়েছেন স্থানীয় উদ্ধার কর্মীরা। প্রবল বর্ষণ-বন্যায় মালয়েশিয়ার যে অঞ্চলগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেসবের মধ্যে অন্যতম পাহাং

এছাড়া, মালয়েশিয়ার সবচেয়ে উন্নত ও জনবহুল প্রদেশ হিসেবে পরিচিত সেলাঙ্গোরেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেশটির রাজধানী শহর কুয়ালালামপুরের অবস্থান এই প্রদেশেই।

মালয়েশিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কুয়ালালামপুর মূল শহরের বেশিরভাগ এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের পর এত প্রলয়ঙ্কারী বন্যা কুয়ালালামপুরে দেখা যায়নি।

মহামারির এই সময়ে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হওয়ার কারণে করোনা সংক্রমণে উল্লম্ফন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে শঙ্কা জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্যবিভাগ।

তবে সোমবার থেকে মালয়েশিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চলে কমে এসেছে বৃষ্টি। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া লোকজনও ধীরে ধীরে বাড়িমুখো হচ্ছেন।

তাদেরই একজন সাজাতু রেমলি। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বের হওয়ার সময় বাচ্চাদের জন্মসনদপত্রসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ সঙ্গে নিতে পেরেছিলাম। এগুলো ছাড়া এখন আমাদের আর কিচ্ছু নেই।’

দুর্যোগ মোকাবেলায় মালয়েশিয়ার সরকারের ভূমিকা নিয়ে জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভও দেখা যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন, বন্যার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ ভালোভাবে সতর্ক করেনি আর এখন তাদের উদ্ধার তৎপরতাও খুবই ধীরগতির।

‘(কর্তৃপক্ষের) ধীর প্রতিক্রিয়াই আমাকে ক্ষুব্ধ করেছে। বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করার তিন দিন পর বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী আজ সকালে এসে পৌঁছেছে এবং এখনও তারা তাদের নৌকাগুলোর নাট-বল্টু লাগানো নিয়েই ব্যস্ত, অথচ মানুষ মারা যাচ্ছে,’- স্ব-উদ্যোগে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া এক ব্যক্তি এমনটাই বলেছেন সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে।

সেলাঙ্গোরে বন্যার পানি বাড়তে থাকা অবস্থায়ও মালয়েশিয়ার দুটি বড় রাজনৈতিক দল তাদের বার্ষিক সভা চালিয়ে গিয়েছিল।

বন্যায় ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম ক্লাং থেকে নির্বাচিত বিরোধীদলীয এক আইনপ্রণেতা বন্যার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিক্রিয়াকে ‘খুবই অপর্যাপ্ত’ ও ‘দুর্বল’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন। টুইটারে স্থানীয় ভাষায় ‘খুনি সরকার’ হ্যাশট্যাগ ভাইরাল হয়ে গেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে দলবদ্ধ হয়ে অনেকে উদ্ধার কার্যক্রমে সহায়তা করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। অনেকে কায়াক ও লাইফ জ্যাকেটের মতো উপকরণ কিনছেন, অনেকে বাস্তুচ্যুতদের নিজের ঘরে আশ্রয় দিচ্ছেন।

আটকা পড়াদের উদ্ধারে কায়াক ও অন্যান্য উদ্ধার সরঞ্জাম কেনা আদিব হারিথ স্থানীয় সংবাদমাধ্যম স্টারকে বলেছেন, “আমার সঙ্গে যারা আছে তাদের সবার সঙ্গে টুইটারে পরিচয় হয়েছে আমার, তাদের সবারই অন্যকে সাহায্য করার আগ্রহ আছে। একসঙ্গে আমরা প্রায় ২০০ আটকা পড়া মানুষকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিয়েছি।”

প্রধানত মালয়েশিয়ার পূর্ব উপকূল বন্যাপ্রবণ; বিশেষ করে অক্টোবর থেকে মার্চের মধ্যবর্তী বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় নিয়মিতই বন্যা দেখা যায়।

সূত্র: বিবিসি

আরপি/ এমএএইচ-১০



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top