রাজশাহী মঙ্গলবার, ১৩ই মে ২০২৫, ৩০শে বৈশাখ ১৪৩২


ওসি-এসআই পরিচয়ে কোটি টাকা হাতিয়েছে তারা


প্রকাশিত:
২ জুন ২০২২ ০৩:৪৪

আপডেট:
২ জুন ২০২২ ০৩:৪৫

ছবি: গ্রেফতারকৃত আসামীরা

কখনো মোহাম্মদপুর থানার সাবেক ওসি আবার কখনো পুলিশের এসআই পরিচয় দিত তারা। নানা কথা বলে মন ভুলিয়ে আকৃষ্ট করত লোকজনকে। ভালো বেতনের চাকরি দিতে পারবে এমন আশ্বাস দিয়ে বেকার যুবকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতো টাকা। এরপর তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নকল ও নিয়োগপত্র ও অফিস আদেশ। এভাবে গত ৫ বছর ধরে প্রতারণা করে ৫০ যুবকের কাছ থেকে দুই কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

বুধবার রাতে মিরপুর ও মতিঝিল এলাকা থেকে এমন একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে বুধবার দুপুরে র‌্যাব-৩ এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে গ্রেফতার চারজনের ব্যাপারে বিস্তারিত জানান অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

গ্রেফতাররা হলেন- মূলহোতা হেলাল উদ্দিন (৫১), মফিজুল ইসলাম ওরফে লেবু (৪৭), খন্দকার মারুফ (৩৭), আব্দুল কাদের ওরফে রাজু (২৯)। তাদের বাড়ি যথাক্রমে গোপালগঞ্জ, বগুড়া ও কুড়িগ্রাম।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের কর্মকর্তা জানান, চক্রটির মূলহোতা হেলাল উদ্দিন বস সেজে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভুক্তভোগীদের ইন্টারভিউ নিতো। চাকরি প্রত্যাশীদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য উবারের একটি গাড়ি ভাড়া করে চলতো, যেটি নিজের গাড়ি বলে চালিয়ে সরকারি বিভিন্ন অফিসে সামনে গিয়ে অফিসে প্রবেশ ও বাহির হতো। এরপর বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সিলমোহর ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভুয়া স্বাক্ষর সম্বলিত বিভিন্ন অফিস আদেশ এবং ভুয়া নিয়োগপত্র খামে ভরিয়ে ভুক্তভোগীদের হাতে ধরিয়ে দিত।

গ্রেফতার মফিজুল এবং আব্দুল কাদের রাজু দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে লালমনিরহাট, বগুড়া, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চাকরিপ্রার্থী এবং অভিভাবকদের তাদের কাছে নিয়ে আসত। তাদের মধ্যে মারুফ অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা এবং একটি বিশেষ অঞ্চলের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম ভাঙিয়ে নিজেকে জাহির করতো। বিশ্বস্ততা অর্জনে মো. হেলাল উদ্দিনকে সহায়তা করতো।

গ্রেফতার মারুফ চক্রের মূলহোতা হেলাল উদ্দিনের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছে। চাকরিপ্রার্থী ও তাদের অভিভাবকদের বেশি বিশ্বাস অর্জনের জন্য হেলাল তার অন্যতম সহযোগী খন্দকার মারুফের সহায়তা নিতো।‌

আরিফ মহিউদ্দিন আরও জানান, চক্রের সদস্যরা বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য চাকরি প্রার্থীদের মেডিকেল পরীক্ষার নামে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিয়ে যেত। প্রথমে তারা প্রতিশ্রুতি দিত যে, চাকরি হওয়ার পর টাকা নেওয়া হবে। কিন্তু পরে বিভিন্ন অজুহাতে চাকরিপ্রার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে অগ্রিম টাকা নিতো এবং ভুয়া নিয়োগ দেওয়ার আগের রাতে আরও টাকা চাইতো। টাকা না দিলে চাকরি নিশ্চিত করা যাবে না বলে জানাতো। ভুক্তভোগীরা চাকরি পাওয়ার আশায় তাদের চাহিদামত অগ্রিম টাকা দিতে বাধ্য হতো। এভাবে চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বেকার চাকরি প্রার্থীদের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে চাকরির লোভ দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিল। যদিও তারা কোন ব্যক্তিকে চাকরি দিতে পারেনি। গত ৫ বছর ধরে চক্রটি ৫০ জন চাকরিপ্রার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে এভাবে প্রতারণা করে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

প্রতারকদের পরিচয়

চক্রের হোতা হেলাল উদ্দিন বগুড়ার একটি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেছেন। তিনি নিজেকে মোহাম্মদপুর থানার অবসরপ্রাপ্ত ওসি হিসেবে পরিচয় দিতেন। হেলালের অন্যতম সহযোগী খন্দকার মারুফ এইচএসসি পাস হলেও অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা এবং একটি বিশেষ অঞ্চলের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম ভাঙিয়ে নিজেকে জাহির করে বিশ্বস্ততা অর্জনে হেলালকে সহায়তা করতেন। অন্যদিকে প্রতারক চক্রের আরেক সদস্য মফিজুল ইসলাম ওরফে লেবু। এসএসসি পাস করা লেবুর বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে। তিনি ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ছিলেন।

প্রতারক চক্রের আরেক সদস্য আব্দুল কাদের ওরফে রাজু একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা পাস করেন। মূলত বেকার যুবকদের টার্গেট করে নিয়ে আসার কাজটি করতো মফিজুল ইসলাম লেবু এবং আব্দুল কাদের রাজু। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে লালমনিরহাট, বগুড়া, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চাকরি প্রার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের হেলালের কাছে নিয়ে আসতো। এরপর তাদের কাছ থেকে প্রতারণ করে অর্থ হাতিয়ে নিতো। চাকরিপ্রার্থী ভুক্তভোগীদের আর্থিক অবস্থান ভেদে তারা জনপ্রতি ৫ থেকে নয় লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

 

আরপি/এসআর-০৪



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top