রাজশাহী সোমবার, ১২ই মে ২০২৫, ৩০শে বৈশাখ ১৪৩২


জন্মদিনে নবী সা. কি করতেন?


প্রকাশিত:
৬ আগস্ট ২০২২ ০৪:৫৩

আপডেট:
১২ মে ২০২৫ ২৩:১০

ফাইল ছবি

সারা বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ এসেছিলেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (স.)। তিনি জন্মদিন উদযাপন করতেন জন্মের বার হিসেবে, তারিখ হিসেবে নয়। তাঁর জন্মদিন ছিল সোমবার। এদিন তিনি কোনো উৎসব, মিছিল বা ভোজনরসিকতা করতেন না, বরং রোজা রাখতেন।

হাদিসবিশারদরা লিখেছেন, সোমবার মহানবী (স.)-এর জন্মের দিন হওয়ায় প্রতি সোমবার রোজা রাখা মোস্তাহাব। হজরত আবু কাতাদাহ আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (স.)-কে সোমবার রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ওই দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি। ওই দিনই আমি নবুয়ত লাভ করেছি বা আমার ওপর ওহি অবতীর্ণ হয়..।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

প্রিয়নবী (স.) যে যুগে জন্মগ্রহণ করেছেন, সে যুগে জন্মতারিখ রেজিস্ট্রি করে রাখার প্রথা ছিল না। সে হিসেবে রাসুল (স.)-এর জন্মতারিখ কোথাও লিপিবদ্ধ হয়নি। তাঁর জন্মের তারিখ হিসেবে ১২ রবিউল আউয়াল বেশি প্রসিদ্ধি পেলেও সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য অভিমত হলো—আবরাহার হস্তীবাহিনীর ঘটনার ৫০ থেকে ৫৫ দিন পর ৮ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময় তিনি আবু তালিবের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), জুবাইর ইবনে মুতঈম (রা.), আল্লামা ইবনুল জাওজি, কুতুবউদ্দীন কাসতালানি (রহ.)সহ বেশির ভাগ মুহাদ্দিস ও জীবনীকার এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। (সিরাতে মুস্তফা (বাংলা) : ১/৬৩-৬৪, ইদ্রিস কান্ধলবী, জুরকানি: ১/১৩০-৩১)

প্রখ্যাত ঐতিহাসিক মুহাম্মদ সুলাইমান মানসুরপুরী ও মাহমুদ পাশার অনুসন্ধানি অভিমত হলো—রাসুল (স.)-এর জন্মতারিখ ৯ রবিউল আউয়াল। ইংরেজি পঞ্জিকা মতে, তারিখটি ছিল ৫৭০ সালের ২০ অথবা ২২ এপ্রিল। (মাহমুদ পাশা, তারিখে খুজরি, প্রথম খণ্ড, পৃ. ৬২, সুলাইমান মানসুরপুরী, রাহমাতুল্লিল আলামিন, প্রথম খণ্ড, পৃ-৩৮-৩৯)

সুতরাং ১২ রবিউল আউয়াল নবীজির জন্মতারিখ বিষয়টি স্পষ্ট ও প্রমাণিত নয়। তবে, ওই তারিখে তাঁর ওফাত বা ইন্তেকাল হওয়ার ব্যাপারে কারো মতবিরোধ নেই। কেননা তত দিনে তিনি বিশ্বনবী হিসেবে গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তাই মানুষ গুরুত্বের সঙ্গে তাঁর ওফাত দিবসের তারিখ স্মরণে রেখেছে এবং ইতিহাসের পাতায় তারিখটি ঠাঁই করে নিয়েছে।

যদি মেনে নেওয়া হয় যে, ১২ তারিখ রাসুল (স.)-এর জন্মতারিখ, তাহলে দেখা যায় ওই দিনই তাঁর ওফাত দিবস। তাহলে তো দিনটি একইসঙ্গে আনন্দ ও বেদনার। আর শোকের দিনে আনন্দ-ফূর্তি করা যায় কীভাবে? সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে—সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেইনরা তাঁদের যুগে ১২ রবিউল আউয়ালকে খুশির দিবস হিসেবেও পালন করেননি, শোক দিবস হিসেবেও না।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে মুসলিম সমাজে যেভাবে জন্মদিন পালন হচ্ছে তার অনুমোদন ইসলামে নেই। সাহাবি ও তাবেয়িদের যুগে কেউ কেক কেটে জন্মদিন পালন করেননি। মূলত এভাবে জন্মদিন পালনের উদ্ভব হয় পশ্চিমা দেশগুলোতে। আর জন্মদিনের সূচনা হয় ফিরাউন থেকে। বাইবেলের বুক অব জেনেসিসে এসেছে, ‘তৃতীয় দিনটা ছিল ফিরাউনের জন্মদিন। ফিরাউন তার সব দাসদের জন্য ভোজের আয়োজন করলেন। সেই সময় ফিরাউন রুটিওয়ালা ও খাদ্যদ্রব্য পরিবেশককে কারাগার থেকে মুক্তি দিলেন।’ (আদি পুস্তক: ৪০২)

প্রিয় পাঠক! আসুন আমরা সঠিক সুন্নাহর অনুসরণ করি। নবীজির আদর্শ আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করি। নবীজির জন্মদিন পালনে সোমবার এবং ১২ রবিউল আউয়ালে রোজা রাখি। নিজেদের জন্মদিন পালনে আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া জ্ঞাপন করি, গুনাহ মাফ ও হেদায়েতের দোয়া করি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

আরপি/ এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top