বট-পাকুড় গাছের বিয়ে!

দিনভর বেজেছে গান বাজনা। টাঙানো হয়েছে শামিয়ানা। লাগনো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন লাইট। বিয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে চারপাশ। কলাগাছ দিয়ে সাজানো বিয়ের আসর। উৎসবের কোনো ঘাটতি নেই। পাশেই ব্যস্ত রাঁধুনিরা। মূলত বিয়ের জন্য যা কিছু লাগে তার সব আয়োজন দেখা গেল। কিন্তু বর-কনের দেখা নেই।
একটু পরেই জানা গেল এই আয়োজন করে বিয়ে হয়েছে দুটি গাছের। তার একটি বট অন্যটি পাকুড় গাছ।
দুই গাছের বিয়ে হয়েছে হিন্দু শাস্ত্রমতে। পুরোহিত মন্ত্র পাঠ করেছেন। দাওয়াত খেয়েছেন হাজারও মানুষ।
ধুমধামে এই বিয়ে হয়েছে রাজশাহী নগরীর খড়খড়ির শ্রী শ্রী গোপালদেব ঠাকুর মন্দিরে।
বিয়ে ঘিরে বর-কনের পাশে ছাদনাতলা সাজানো হয়। দুপুর ১২টায় সেখানে নারায়ণ পূজার মধ্য দিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। নারীরা পুকুরে গিয়ে গঙ্গাপূজা সেরে আসেন। জল দিয়ে ভরে আনেন ঘটক।
সবাই মিলে পালের বাড়ি থেকে আনেন হাঁড়ি। বিকাল ৪টা থেকে ছাদনাতলায় মঙ্গলঘট বসিয়ে শুরু হয় বিয়ের নিবেদন। কিছুক্ষণ পরই একদল নারী আসেন বরযাত্রী হয়ে। গেটে বাতাসা খাইয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয় তাদের।
বাদ্য-বাজনা আরও বেড়ে যায়। এবার নেচে ওঠেন সব বয়সী মানুষই। বর-কনের চারপাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকেন অতিথিরা।
পুরোহিত পুলক আচার্য শুরু করেন বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা। গোধূলিলগ্নে মন্ত্র পড়ে বিয়ে সম্পন্ন করেন পুরোহিত।
স্থানীয়রা জানায়, একশ বছরেরও বেশি বছর বয়সী পুরনো এ মন্দির প্রাঙ্গণে ১৭ বছর আগে পাশাপাশি গাছ দুটি লাগানো হয়েছিল। হিন্দু শাস্ত্রমতে, পাশাপাশি বট-পাকুড় গাছ থাকলে তাদের বিয়ে দিতে হয়। এই রীতি মেনেই শনিবার ধুমধাম করে বিয়ে দেয়া হলো গাছ দুটির।
বটকে বর, পাকুড়কে কনে ধরে বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের আগে বটের নাম রাখা হয় ‘বিজয়’। আর পাকুড়ের নাম হয় ‘বনলতা’।
এই বিয়েতে বটের বাবা-মা হয়েছিলেন বিধান চন্দ্র সরকার ও আরতি রানী সরকার দম্পতি।
পাকুড়ের বাবা হয়েছিলেন বিশ্বজিৎ সরকার ও মা হয়েছিলেন কনিকা রানী সরকার।
কনিকা বলেন, ১০ দিন আগে তিনি পাইকড়ের মা হন। মেয়ের বিয়ে দেয়া উপলক্ষেই তিনি মা হয়েছেন। মেয়ের বিয়ে তিনি আনন্দিত।
বিয়ের এই অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ খেতে এসেছিলেন হাজারখানেক অতিথি। আমন্ত্রিতদের খাওয়ানো হয় পোলাও, সবজি ঘণ্ট আর পায়েস। সঙ্গে ছিল জলপাইয়ের আচার।
মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সরকার বলেন, ‘হিন্দু শাস্ত্রে আছে বট-পাকুড় পাশাপাশি থাকলে তাদের বিয়ে দিতে হয়। সে জন্যই এ আয়োজন। বট-পাকুড় এখন আজীবন এভাবে পাশাপাশি থাকবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
আরপি/ এমএএইচ-১৩
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: