রাজশাহী মঙ্গলবার, ৬ই মে ২০২৫, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩২


অসহায় শিক্ষার্থীর পাশে রাজশাহী কলেজ


প্রকাশিত:
২০ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:৪১

আপডেট:
৬ মে ২০২৫ ০৫:২৬

শিক্ষার্থী জান্নাতুন আক্তারের হাতে স্মার্টফোন তুলে দিচ্ছেন অধ্যক্ষ মহা. হবিবুর রহমান।

অসহায় ও মেধাবী শিক্ষার্থী জান্নাতুন আক্তারের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজশাহী কলেজ প্রশাসন। প্রতি মাসে শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থাসহ ওই শিক্ষার্থীর অনলাইন ক্লাশের জন্য স্মার্টফোন কিনে দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। শনিবার দুপুরে কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে দ্বাদশ শ্রেণির মেধাবী ওই শিক্ষার্থীর হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেন অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান। এ সময় গ্রন্থাগারিক মুহাম্মদ মহিউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

মেধাবী শিক্ষার্থী জান্নাতুন আক্তার নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দনগর ইউনিয়নের তালপুকুর গ্রামের জিয়াউর রহমানের মেয়ে। বাবা জিয়াউর রহমান অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করে সংসারের খরচ চালান। তিন বছর আগে জমি লিজ নিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন তিনি।

এ ক্ষতি সামলাতে ও সংসারের হাল ধরতে কাজ নেন পোশাক কারখানায়। কিছু দিন কাজ করার পর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেই সময় বাবা চাকরি হারান। এতে সংসারে চলে নানান টানাপোড়েন। অভাব অনটনের মধ্যে দিয়েই উপজেলার বামইন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।

রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসে কথা হয় শিক্ষার্থী জান্নাতুন আক্তারের সাথে। সে জানায়, সংসারে বড় দুই বোনের মধ্যে বড় সে। ছোট বোন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বাবা দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। করোনার মধ্যে নানার সহায়তায় সংসার চলেছে। টাকার অভাবে স্মাট ফোন কিনতে পারেনি। এদিকে কলেজের প্রিটেস্ট পরীক্ষার রুটিনও দিয়েছে। স্মার্টফোন না থাকায় আগের অনলাইন ক্লাশগুলো করতে পারি নাই।

ওই শিক্ষার্থী জানায়, রাজশাহী কলেজের এক শিক্ষক অধ্যক্ষ স্যারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। স্যারের পরামর্শে অধ্যক্ষ স্যারের সাথে যোগাযোগ করি। তারপর অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান স্যার আমাকে এই স্মার্টফোন দেন।

শিক্ষার্থী আরও জানায়, স্মার্ট ফোনের জন্য পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ নিয়ে খুবই চিন্তায় ছিলাম। ভেবে ছিলাম ফোনের কারণে হয়তো বা পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারবো না। অধ্যক্ষ স্যার ফোনটি দেওয়ায় এখন থেকে অনলাইন ক্লাশ এবং পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারবো তা ভেবেই অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে। কৃতজ্ঞতা জানাই অধ্যক্ষ স্যারের প্রতি। শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে কাজ করবে এমন অধ্যক্ষ যেন প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকে।

রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী জান্নাতুন আক্তারের বাবা এক সময় পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। শারীরিক অসুস্থতার জন্য চাকরি হারিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে তার পরিবার লেখা-পড়ার খরচ চালাতেও পারছিল না। এজন্য কলেজ থেকে প্রতিমাসে বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অধ্যক্ষ বলেন, স্মার্টফোন না থাকায় অনলাইন ক্লাশগুলোতে সে অংশ নিতে পারছিলো না। আবার ২৭ তারিখ থেকে তার প্রি টেস্ট পরীক্ষা শুরুর কথা রয়েছে। যেহেতেু তার স্মার্টফোন নেই। আবার মোবাইল ফোন কেনার জন্য তার অর্থ সংকুলান হচ্ছে না। তাই শিক্ষার্থীদের ফান্ড থেকে প্রায় ৮ হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল ফোন তাকে কিনে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এর আগে আরও একজন শিক্ষার্থীকে মোবাইল ফোন কিনে দেওয়া হয়েছে।

অধ্যক্ষ আরও বলেন, শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আসল মানদন্ড হলো আমাদের যারা শিক্ষার্থী, আমরা তাদের কল্যাণে কতটুকু কী করছি। রাজশাহী কলেজ শ্রেষ্ঠ মানে সবাইকে নিয়েই শ্রেষ্ঠ, সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ছাত্রনেতা সবাই এই শ্রেষ্ঠত্বের অংশীদার। আমরা চাই, অর্থের অভাবে দরিদ্র ঘরের সন্তানরা যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়।

এর আগে, নওগাঁর মান্দা উপজেলার অসহায় দুই শিক্ষার্থী রনি ও রিপনের রাজশাহী কলেজে ভর্তি এবং পড়ালেখার যাবতীয় খরচের দায়িত্ব নেন অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান।

 

আরপি/এসকে



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top