রাজশাহী শুক্রবার, ৮ই আগস্ট ২০২৫, ২৫শে শ্রাবণ ১৪৩২


মহাদেবপুরে ভূয়া ভাউচার দাখিল প্রমাণ হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি : বিল পরিশোধের পাঁয়তারা


প্রকাশিত:
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:৫৪

আপডেট:
৮ আগস্ট ২০২৫ ১৩:২৪


 নওগাঁর মহাদেবপুরে প্রকল্পের কোন কাজ না করেই শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে ভূয়া ভাউচার দাখিল করার বিষয় প্রমাণিত হলেও সংশ্লিষ্ট ৪৯ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনেও কোনই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। উল্টো ওই ভূয়া ভাউচারের বিল পরিশোধের পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
গত অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি-৪ (পিইডিপি) প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদ্র মেরামত বাবদ ৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ লাখ টাকা করে ৯৪ লাখ টাকা ও ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেড় লাখ টাকা করে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। ৩০ জুনের মধ্যে এসব প্রকল্পের কাজ শুরু না হলেও বিদ্যালয়গুলো থেকে কাজ একশভাগ সমাপ্ত হয়েছে বলে ভূয়া ভাউচার সংগ্রহ করে জমা দিয়ে প্রকল্প থেকে সমুদয় টাকা উত্তোলন করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার একাউন্টে রাখা হয়।

বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক, অনলাইন পোর্টালে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অর্থ-রাজস্ব) শেখ রায়হান উদ্দিন গত ১০ সেপ্টেম্বর বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য মহাদেবপুর আসেন। এদিন বেলা ১১ টায় তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সভাকক্ষে সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেন।
সেখানে উপস্থিত অনেকেই জানান, তদন্তে প্রমাণ হয় যে, নির্ধারিত ৩০ জুনের মধ্যে কোন প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি। শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাখিল করা ভাউচারগুলো ভূয়া ও প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করে সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকের একাউন্টে না দিয়ে শিক্ষা অফিসারের একাউন্টে রাখা হয়েছে।
জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা রায়হানুল ইসলাম বলেন, তিনি ৪৯ শিক্ষকের বক্তব্য লিখিত নিয়েছেন, তদানিন্তন শিক্ষা অফিসার মাযহারুল ইসলাম, বর্তমান শিক্ষা অফিসার সাফিয়া আকতার অপু, উপজেলা প্রকৌশলী সুমন মাহমুদ ও শিক্ষা কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান আহসান হাবিব ভোদনের সাথে কথা বলেছেন এবং সোনালী ব্যাংক মহাদেবপুর শাখা থেকে ষ্টেটমেন্ট নিয়েছেন।
তিনি জানান, উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে কাজের প্রাক্কলন (এষ্টিমেট) পেতে দেরি হবার কারণে সময়মত কাজ শুরু করতে পারেননি বলে প্রধান শিক্ষকরা জানিয়েছেন। তারা এখন কাজগুলো করছেন। কাজ শেষ হবার পর পরিদর্শন করে বিল প্রদানের দাবি জানান।
কিন্তু কাজ শেষ করার জন্য সময়ের আবেদন না করে ভূয়া ভাউচার কেন দাখিল করেছেন তার কোন জবাব তিনি পাননি। ৩০ জুনের পর কাজ করার সময় বাড়ানো না হলেও তখন তারা কিভাবে প্রকল্পের কাজ করছিলেন তারও কোন জবাব তারা দিতে পারেননি।
তার তদন্তের পর শিক্ষকরা জোড়ে সোড়ে প্রকল্পের কাজ করা শুরু করেন। অনেকের কাজই এখন শেষ পর্যায়ে। সংবাদ প্রকাশের পর যে শিক্ষকেরা কাজ শুরু করতে দ্বিধা দ্ব›েদ্ব ভূগছিলেন তারাও কাজ শুরু করেন। তাদের কিছু হবেনা এরকম নিশ্চিত হয়েই কাজ করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, তারা ভূয়া ভাউচার দাখিল করেছেন যাতে সময়মত কাজ করতে না পারার জন্য বরাদ্দের টাকা ল্যাপস হয়ে ফেরৎ না যায়। সময় পার হয়ে গেলেও তারা কাজ সম্পন্ন করে তবেই বিল নিবেন।
ভূয়া ভাউচার দাখিল ও বিধিবহি:র্ভূতভাবে সময় পার হয়ে যাবার পর কাজ করাকে শিক্ষকরা কোন অপরাধ বলে মনেই করছেন না। বরং এসব বিষয় নিয়ে লেখালেখি করা সাংবাদিকদের ভর্ৎসনা করছেন যে, লেখালেখির কারণে বরাদ্দের টাকা ফেরৎ গেলে এলাকার ক্ষতির কারণ হবে।

অভিজ্ঞ মহলের মতে, কাজ না করেই ভূয়া ভাউচার দাখিল করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা সরকারের সাথে প্রতারণা করেছেন। মানুষ গড়ার কারিগরদের এমন অপরাধ অবশ্যই শাস্তিযোগ্য।
এবিষয়ে গত সপ্তাহান্তে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভা সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, কাজ শেষ হলে বিলগুলো পরিশোধ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাফিয়া আকতার অপু বলেন, ভূয়া ভাউচার দাখিলের বিষয় কিছু হবেনা। সময় পার হলেও কাজ শেষ হলে বিল দেয়া হবে। তিনি জানান, স্কুলগুলোর কাজ এখনও শেষ হয়নি। আগামী সপ্তাহে শেষ হলে তিনি পরিদর্শন করবেন।
একটি তদন্তাধিন বিষয়ের অভিযোগের কোন সুরাহা হবার আগে বিল তিনি দিতে পারেন কিনা সে বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।#


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top