রাজশাহী মঙ্গলবার, ৫ই আগস্ট ২০২৫, ২২শে শ্রাবণ ১৪৩২


মহামারি রুখতে বিশ্বনেতাদের ‘চুক্তির’ আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর


প্রকাশিত:
২৩ মে ২০২২ ০৯:০৬

আপডেট:
৫ আগস্ট ২০২৫ ২১:১০

ফাইল ছবি

ভবিষ্যৎ মহামারি থেকে বিশ্ববাসীকে বাঁচাতে সুরক্ষার অংশ হিসেবে ‘মহামারি চুক্তিতে’ পৌঁছানোর জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (২২ মে) ৭৫তম বিশ্ব স্বাস্থ্য অ্যাসেম্বলি’র উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনে সম্প্রচারিত এক ভিডিও বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান তিনি।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ২২ থেকে শুরু হয়ে ওই সমাবেশ চলবে আগামী ২৯ মে পর্যন্ত। কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর এটিই প্রথম ইন-পারসন স্বাস্থ্য বিষয়ক সমাবেশ।

ভিডিও বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভবিষ্যৎ মহামারিগুলো মেকাবিলার লক্ষ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত সাড়া প্রদানের জন্য আমাদের অবশ্যই মহামারি চুক্তিতে পৌঁছাতে কাজ করতে হবে।’

লাখ লাখ মানুষকে টিকাদানের প্রচেষ্টার বাইরে রেখে তারা টেকসইভাবে পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা নিশ্চিত করতে পারেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন বাড়াতে প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞান শেয়ার করা দরকার।

কোভিড-১৯ মহামারি এখনও সারা বিশ্বে জীবন ও জীবিকার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সরকার স্বাস্থ্যসেবা, আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে মহামারির হুমকি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় সাপেক্ষ ২৮টি উদ্দীপনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি, যা আমাদের জিডিপির প্রায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। আমরা প্রায় ৪০ মিলিয়ন ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে নগদ ও অন্যান্য সহায়তা দিয়েছি। আমরা আমাদের জনগণকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছি।

এ সময় মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ আশ্রয় শিবিরেও মহামারি নিয়ন্ত্রণে তার দেশ সক্ষম হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার সরকার আমাদের জাতীয় বাজেট থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য এক দশমিক ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী কোভ্যাক্স-এর মাধ্যমে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের লক্ষ্য অনুযায়ী জনসংখ্যার শতভাগেরও বেশি লোককে ইতোমধ্যে টিকা দেওয়া হয়েছে।

দেশের ফ্রন্টলাইন পরিসেবা প্রদানকারীদের নিবেদিত কাজের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ওষুধ, পিপিই ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের পাঠিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। আমরা বিশ্বাস করি যে, ভ্যাকসিনকে বিশ্বব্যাপী গণসামগ্রী হিসাবে বিবেচনা করা উচিত।

দেশনেত্রী বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়কে অবশ্যই ব্যাধির চাপের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিষয়ে বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অবহেলিত গ্রীষ্মম-লীয় রোগসহ চিকিৎসা গবেষণায় সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে সমন্বিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে।



শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অসংক্রামক রোগের বিস্তারের বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে। পাশাপাশি ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস রোগের বিষয়ে গবেষণা এবং চিকিৎসা লাভের সুবিধার জন্য সকলকে আরও বিনিয়োগ করতে হবে।

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় জরুরি সাড়া প্রদানের অংশ হিসাবে সমাধান করা উচিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সড়ক দুর্ঘটনা, ডুবে মারা যাওয়া এবং অন্যান্য জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সহায়তা চাই।’

এ সময় প্রথাগত ওষুধের গবেষণা ও মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ভারত সরকার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ সব বয়সের মানুষের জন্য সুস্থ জীবনযাপনের লক্ষ্যে এসডিজি-৩ অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ভিডিও বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমরা ১৮ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে আমাদের জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশ সরকার সক্রিয়ভাবে শিশুপুষ্টি নিয়ে কাজ করছে এবং ২০০৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে স্টান্টিং এবং অপচয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ২০২২ সালের শেষ নাগাদ দক্ষ ধাত্রীদের দ্বারা ৬৫ শতাংশ প্রসব এবং ২০২২ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ প্রসবপূর্ব-সেবা নিশ্চিত করা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য শাসনের ক্ষেত্রে ডব্লিউএইচও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই ডব্লিওএইচওকে টেকসই অর্থায়ন করতে হবে এবং বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সহায়তা দিতে এটিকে সক্ষম করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য এবং কূটনীতির জন্য আমাদের অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তার ভূমিকা পালন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এ দিন সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, কেনিয়া, বতসোয়ানা ও ক্রোয়াশিয়া প্রেসিডেন্টগণ ছাড়াও ইকুয়েডরের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘ মহাসচিব বক্তব্য রাখেন।

 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top