রাজশাহী মঙ্গলবার, ১৩ই মে ২০২৫, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩২


শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল বিভিন্ন সড়ক


প্রকাশিত:
১ ডিসেম্বর ২০২১ ০১:২৩

আপডেট:
১৩ মে ২০২৫ ২২:১২

ছবি: সংগৃহীত

বাস চাপায় সহপাঠীর মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার, নিরাপদ সড়কসহ কয়েকটি দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীতে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। দিন যত যাচ্ছে তাদের আন্দোলন তীব্র হচ্ছে। তারপরও সড়কে বেপরোয়া গাড়ির চাপায় শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার ঘটনা থামছে না।

গত সপ্তাহে গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ির চাপায় নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর সড়কে নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে তাদের চলমান আন্দোলনের মধ্যেই সোমবার (২৯ নভেম্বর) রাতে গ্রিন অনাবিল পরিবহনের একটি বাসের চাপায় রামপুরা বাজারের সামনে প্রাণ হারান আরেক শিক্ষার্থী (এএসসি পরীক্ষার্থী দুর্জয়)। ওই ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেন।

আগের ঘটনার রেশ না কাটতেই সোমবারের রাতের ঘটনা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরো বেগবান করে। যে কারণে সকালেই তারা নেমেছেন সড়কে। ‘ছাত্র সমাজ জেগেছে, উই ওয়ান্ট জাস্টিস, সড়কের হত্যাকারীদের বিচার চাই’- তাদের এমন স্লোগানে উত্তাল ঢাকার সড়ক।

ক্লাস শেষ হতেই কাঁধে ব্যাগ নিয়ে সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক দখলে নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। রাস্তায় বসে অবরোধ করছেন তারা।

রামপুরা এলাকায় একরামুন্নেসা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইনুদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় সকাল ১০টা থেকে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ইম্পেরিয়াল কলেজ, ন্যাশনাল আইডিয়াল ও রাজধানী আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

তারা রামপুরা ব্রিজের সড়কে বসে যান। এতে সড়কের দুইপাশে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে থাকা বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের সঙ্গে কথা বলে যাদের জরুরি প্রয়োজন রয়েছে তাদেরকে ছেড়ে দিচ্ছেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে রয়েছে। আপাতত যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ইম্পেরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার বাপ্পি বলেন, কোনো শিক্ষার্থী মারা গেলেই আমাদের নতুন নতুন আশ্বাস দেওয়া হয়। বলা হয় ফুটওভারব্রিজ করবে। আমরা এখন আর ফুটওভার ব্রিজ চাই না। আমরা হত্যাকারীদের বিচার চাই।

এদিকে মতিঝিল এলাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে মতিঝিল শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ উচ্চ বিদ্যালয়, মতিঝিল সেন্ট্রালের ছাত্ররা শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।

এ সময় তারা ‘জেগেছে জেগেছে ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’- স্লোগান দেন। সড়কে তাদের অবস্থানের কারণে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে ওই এলাকায়।

একই দাবিতে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের সড়ক অবরোধ করেছে মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর গভর্মেন্ট কলেজ, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা।

বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ধানমন্ডি-২৭ রাপা প্লাজার সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় পুলিশ ও ট্রাফিক সদস্যদের আশপাশে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

লালমাটিয়া মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী শাহরিন শামস বলেন, আমাদের জন্য ঢাকার সড়ক মোটেও নিরাপদ নয়। শিক্ষার্থীরা নিয়মিতই মরছে এই সড়কে। নটরডেমের শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর গতকাল আরেক এসএসসি শিক্ষার্থী মারা গেল। সুষ্ঠু বিচার ও ব্যবস্থাপনা না থাকায় এমনটি হচ্ছে। সড়ক নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।

একই দাবিতে মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) দুলাল হোসেন বলেন, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আশপাশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করায় সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

সহপাঠী হত্যার বিচার চেয়ে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও নীলক্ষেত এলাকায়ও বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘আমার ভাই কবরে খুনি কেন বাহিরে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

এর আগে বেলা পৌনে ১১টার দিকে নীলক্ষেত মোড় অবরোধের চেষ্টা করেন ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ঢাকা কলেজের শিক্ষকদের মারমুখী আচরণের কারণে তারা দাঁড়াতে পারেননি।

পরে ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিলিত হয়ে মিছিল শুরু করেন।

আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রুবাইয়া বলেন, আমরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমেছি। রাস্তায় প্রতিদিন শিক্ষার্থী মারা যাচ্ছে। আমরা এর বিচার চাই। আমরা চাই না আর কোনো শিক্ষার্থী বাসের চাকায় পিষ্ট হোক।

ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী জীবন আহমেদ বলেন, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সড়কে অবস্থান ছাড়ব না। আমরা সহপাঠী হত্যার বিচার চাই।

 

আরপি/ এমএএইচ-০১



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top