রাজশাহী শুক্রবার, ১৬ই মে ২০২৫, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাজশাহীতে ফেন্সিডিলের বিকল্প এখন কাশির সিরাপ


প্রকাশিত:
১১ জুলাই ২০২১ ০৪:২৬

আপডেট:
১৬ মে ২০২৫ ০৮:৩৮

প্রতীকী ছবি

সর্দি-কাশি না হলেও ছোট-থেকে বড় সব বয়সের মানুষ ছুটছেন ওষুধ দোকানে। কিন্তু অধিকাংশের হাতেই প্রেসক্রিপশন তবে সমস্যা নেই, মুখে বললেই চাহিদামত মিলছে কাশির সিরাপ।

রাজশাহীর চারঘাটে ফেনসিডিলের দাম খুবই চড়া। অনেক সময় দুই হাজার টাকায়ও মিলছে না এ মাদক। করোনা মহামারীর কারনে ভারতীয় সীমান্তে কড়াকড়ি ও ঢালাও মাদক বিরোধী অভিযানে ফেন্সিডিলের সরবারহ কম। এজন্যই মাদক হিসেবে মাদকাসক্তরা বেছে নিয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির কাশির সিরাপ।
এদিকে হঠাৎ করে কাশির সিরাপের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও গেছে বেড়ে। কিন্তু ফেনসিডিলের তুলনায় কম হওয়ায় মাদকাসক্তরা তাতেও খুশি। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ওষুধের দোকানদারা বাড়তি লাভের জন্য গণহারে তা বিক্রি করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চারঘাট রাজশাহীর সীমান্তবর্তী উপজেলা। দেশের মাদকের অন্যতম বড় রুট হিসাবে পরিচিত চারঘাট-বাঘা উপজেলা। চারঘাটের আশে পাশের বিভিন্ন উপজেলা-জেলা থেকে মাদকসেবীরা আসে মাদক সেবন করতে। হাত বাড়ালেই মিলে মাদক। এজন্য এ উপজেলাতেও মাদকসেবীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। তবে করোনাকালে হঠাৎ ভারতীয় সীমান্তে কড়াকড়ি হবার কারনে মাদক হয়ে গেছে দুস্পাপ্য। কাশির সিরাপই শেষ ভরসা।

উপজেলার পৌর সদর, সরদহ বাজার, ট্রাফিক মোড়, হলিদাগাছী, মালেকার মোড়, নন্দনগাছী স্টেশন, সরদহ স্টেশন, ডাকরা, পুঠিমারী, কাঁকরামারী ও পরানপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় নেশার জন্য মাদকসেবীরা এ সিরাপ সেবন করছে।

সূত্র জানায়, আগে ফেনসিডিলের দাম যেখানে প্রতি বোতল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ছিল, এখন তা ২০০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। তাও অনেক সময় মিলছে না। অন্যদিকে এক বোতল ফেন্সিডিল খেলে যে নেশা হয়, মাত্র ৬০ টাকায় দু’টি কফ সিরাপ পান করলে একই নেশা পাওয়া যায়।

সম্প্রতি একটি জরিপ থেকে জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ৩৫ টি ঔষুধের দোকান রয়েছে যেগুলোতে কাশির সিরাপ বেশি বিক্রি হয়। এর মধ্যে তুলনা মূলক ভাবে বিক্রি কম হয় এমন ১০ টি ফার্মেসীর জরিপ অনুযায়ী তারা প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ টা পর্যন্ত কাশির সিরাপ বিক্রয় করে। সে অনুযায়ী প্রতিদিন ১ টি ফার্মেসীতে গড়ে ১০ টি করে সিরাপ বিক্রি হলে যা দাঁড়ায় ৩৫০ টি। সে অনুযায়ী মাসিক ৩৫ টি দোকানে বিক্রী হয় গড়ে ১০,৫০০ বোতল সিরাপ। যার বাজার মূল্য ৫,২৫,০০০ হাজার টাকার বেশী। এটা শুধু পৌর সদরের বাজার ও সরদহ বাজারের চিত্র।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফেনসিডিলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে সিনামিন, তুষকা, ফেনারগান, ডি-প্রোটিন, এক্সপ্রোটিন, প্যানাডিল, হিসটাসিন, অফকফ, ড্রাইডিল, অডোকফ ও প্যাথিড্রিল সিরাপ।

এছাড়া ফ্লোরাজেপাম, সেডিল, সোবানাল, টুইনাল, কেনোবার, গার্ডিনাল, সানড্রেক্স, ফ্লোরাপাম, ট্রায়াজোনাল, লোবাজিপাম, এটিভান, ভ্যালিয়াম রিলাক্সেন নেশা হিসেবে ব্যবহার করছে আসক্তরা।

নেশা হিসেবে কাশির সিরাপের আশঙ্কাজনক বিস্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা। কফ সিরাপ সেবনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শহীদুল ইসলাম রবিন বলেন, অতিরিক্ত কোনো ওষুুধই শরীরে জন্য ভাল না।নিয়মিত অতিরিক্ত কফ সিরাপ সেবনকারীর মস্তিস্ক বিকৃতি ও শ্বাস-প্রশ্বাস ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে যায়।

অভিযোগ রয়েছে, ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই এসব কফের সিরাপ নেশাখোরদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। এ বিষয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা করে একাধিকবার ফার্মেসি মালিকদের সতর্ক করেও লাভ হয়নি।

এ বিষয়ে রবিউল ইডলাম নামে এক ফার্মেসি ব্যবসায়ী বলেন, নেশাখোর সন্দেহ হলে আমরা ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কফের সিরাপ বিক্রি করি না। তবে কাউকে সিরাপ না দিলে বা প্রেসক্রিপশন চাইলে তারা খারাপ ব্যবহার করে তেড়ে আসে।

মাদকাসক্তরা ড্রাগের খাতায় এসব কাশির সিরাপ সিরাপ যুক্ত করলেও এর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোনো অভিযান নেই।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাজশাহী সার্কেল (খ) এর পরিদর্শক লুৎফর রহমান বলেন, কফ সিরাপ
মাদকসেবীরা ব্যবহার করছে। এ বিষয়ে আমাদের অভিযানও চলমান আছে। প্রতিনিয়তই আমরা মাঠে থেকে কাজ করছি।

এ ব্যাপারে চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে চারঘাটে মাদক পাওয়া দুষ্কর হয়ে গেছে। মাদকসেবীরা ড্রাগের ধরন বদলে কাশির সিরাপে ঝুঁকছে। এটা নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাতেও আলোচনা হয়েছে। সকলে মিলেই এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

আরপি/ এসআই



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top