রাজশাহী মঙ্গলবার, ২৬শে আগস্ট ২০২৫, ১২ই ভাদ্র ১৪৩২

আড়াই’শ মেট্রিকটন সার ফিরিয়ে দিল রাজশাহীর বাফার গুদাম


প্রকাশিত:
২৫ জুন ২০২১ ০১:৫১

আপডেট:
২৬ আগস্ট ২০২৫ ২১:৫৪

শিরোইল এলাকায় অবস্থিত বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন গুদাম

রাজশাহীর বাফার গুদাম জমাটবাঁধা আড়াই’শ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার ফিরিয়ে দিয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে গুদামে নামাতে দেয়নি স্থানীয় পরিবেশকরা।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও কৃষি বিভাগ জানায়, “গতকাল রাতে বাফার গুদামে আসা ইউরিয়া সার জমাটবাঁধা। বড়বড় দলা আকৃতির এসব সার ফসলে ব্যবহার অনুপযোগী। তাই এখানকার পরিবেশক ও বাফার কর্তৃপক্ষ সার আনলোড করতে দেয়নি। পরে সেগুলো ঢাকায় ফেরৎ পাঠানো হয়েছে।”

জানা গেছে, গতকাল রাতে ১৫ ট্রাক ইউরিয়া সার ঢাকার নবাব এন্ড কোং লিমিটেড। প্রতি ট্রাকে প্রায় ১৭ টন হিসেবে ২৫৫ টন সার আসলে সেসব সার গুদামে নামাতে দেয়নি বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখা। স্থানীয় পরিবেশকদের আপত্তির মুখে কয়েক ট্রাক সার গ্রহণ করে গুদামে নামানো হয়। তবে, অনুপযোগী সার গুদামে নামানোর ব্যপারে কোন কথা বলতে রাজী হননি গুদাম কর্তৃপক্ষ।

গতকাল দুপুরে রাজশাহী শহরের শিরোইল এলাকায় অবস্থিত বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন গুদামে গিয়ে দেখা যায়, ইতিমধ্যে ট্রাকগুলো সরানো হয়েছে। একটি ট্রাক মাত্রই বেরিয়ে যায় বেলা ১টার দিকে।

গুদাম সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী ও নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার কিছু সার ডিলার এখান থেকে সার সংগ্রহ করে কৃষকের কাছে পৌঁছান। প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি সার হিসাবমতে থাকার কথা কিন্তু প্রতিবস্তায় ৫ থেকে ৭ কেজি সার কম। কিছু কিছু সার পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে বলে জানা যায়।

এসব শক্ত জমাটবাঁধা সার বিষয়ে রাতেই রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কে জে এম আব্দুল আউয়ালকে জানায় বাফার গুদাম কর্তৃপক্ষ। উভয় পক্ষ থেকেই জমাটবাঁধা সার গ্রহণ করতে অস্বীকার করা হয়। ফলে সারারাত ট্রাক আটকে থাকে গুদামের সামনে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় ফেরৎ যায় সবগুলো সার।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, বাফার গুদামে আসা ইউরিয়া সার জমাটবাঁধা অনুপযোগী হওয়ায় সেগুলো গুদামে নামাতে দেওয়া হয়নি। কৃষি বিভাগ জমাটবাঁধা সার ব্যবহার অনুপযোগী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কি পরিমাণ সার এসেছিল বা ফেরৎ গেছে সেসব বিষয়ে কৃষি বিভাগ ভালো বলতে পারবে।

রাজশাহী বাফার গুদামের ইনচার্জ সাজেদুর রহমান বলেন, সারগুলো জমাটবাঁধা তাই সেসব সার নেইনি। কৃষকেরা এসব সার কিনবে না। ফ্রি দিলেও নেবে না; তো সেরকম সার নিয়ে কি করব? এরআগেও নবাব এন্ড কোং লিমিটেড আমাদের গুদামে সার দিয়েছে। তবে এবারের চালানের সার থেকে পানি ঝরছিল। পানিতে ভেজা সার গুদামে নেওয়া অযৌক্তিক, আর সারগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যাওয়ায় ফেরৎ পাঠানো হয়েছে।

গুদামের সহকারী ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, ইউরিয়া সার নাইট্রোজেন আর পানি দিয়ে তৈরি। ৬৪ ভাগ নাইট্রোজেন থাকায় ভেজাল হয় না। কিন্তু যেসব সার এসেছিল সেগুলো পানিতে ভিজে প্রতিবস্তা পাথরের মতো শক্ত হয়ে গিয়েছিল। তাই আনলোড করতে দেইনি। পানিতে ভিজলে সারের গুণগত মান ঠিক থাকে কিন্ত ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখার সভাপতি আবুল কালামের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। প্রত্যক্ষদর্শী আনোয়ার হোসেন ও মেহেদী হাসান জানান, প্রতিবার সার আসে ট্রাক থেকে পানি ঝরতে কোনদিন দেখিনি। এবার যেসব ট্রাক এসেছিল বেশিরভাগ ট্রাক থেকে পানি ঝরছিল। পরে সেসব ট্রাক ফেরৎ পাঠালো শুনলাম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কে জে এম বলেন, বিসিআইসির অধীনে বাফার গুদাম। এটা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। আমি এবং জেলা প্রশাসক মহোদয় সারের বিষয়টি জানতে পারি এবং ঢাকায় ফেরৎ পাঠাই। মূলত সার লোড করার সময় পানি পড়েছিল। এতে সারের গুণগত মান পরিবর্তন হবে না বরং জমাটবাঁধার কারনে কৃষক এটা ব্যবহার করতে পারবে না। পরবর্তীতে এই সার রিব্যগিং করে আবার ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হবে।

আরপি/ এসআই



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top